মো. মুরাদ হোসেন

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

‘বন্ধুত্বের মেলায় হারিয়ে যাই’

বন্ধুত্ব শব্দটি বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আবেগের নাম। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে বন্ধুত্ব নামক ভালোবাসার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। আর তখনই আনন্দময় জীবনের পথচলা শুরু হয়। আমাদের বন্ধুত্বের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারির এক কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মোড়ানো শিক্ষাঙ্গন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সদ্য সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়।

সেদিন ক্লাস শেষে সদ্য পরিচয় ঘটা বন্ধুরা পাহাড়ি ক্যাম্পাস দেখতে একসঙ্গে ঘুরতে বের হই। অচেনা ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে দেখতে পাই সাজানো ক্যাম্পাসের সুসজ্জিত অনুষদ, সুবিশাল খেলার মাঠ, বিস্তৃত পাহাড়ের পাদদেশে এঁকেবেঁকে চলা রাস্তা, পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারার নয়ন জুড়ানো রূপ। প্রকৃতির মাঝে গড়ে ওঠা চবির পাহাড়ি ক্যাম্পাস দেখে তরুণ মনে সেদিন উদ্বেলিত হয়েছিল অভিন্ন ভালো লাগার জোয়ার।

তারপর প্রতিদিন ক্লাস শেষে বেরিয়ে পড়তাম ক্যাম্পাসের নান্দনিক সৌন্দর্য অনুসন্ধানে। একত্রে শুধু ক্যাম্পাসে নয়, চট্টগ্রামের আশপাশের স্থানগুলো ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা। দেখেছি নতুন সৌন্দর্য, পরিচিত হয়েছে চট্টগ্রামের সাথে, চলার পথে জেনেছি একে অপরের ছোট্ট কৈশোর থেকে তারুণ্যের ক্যাম্পাসে আসার দীর্ঘ যাত্রা সম্পর্কে। সময়ের পরিক্রমায় দেশের বিভিন্ন জেলার ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা বন্ধুরা একীভূত হয়েছি বন্ধুত্ব নামক মায়াবি জালে।

বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে কৈশোরের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘চড়ুইভাতি’ আয়োজনের পরিকল্পনা করি। গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে এর কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। কেউ রান্নার কাজে, কেউ লাকড়ি সংগ্রহের কাজে, কেউ মসলা বাটা বা হাঁড়িপাতিল ধোয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মেন্যু ছিল হরেক রকমের ভর্তা, রূপচাঁদা মাছ, মুরগির রোস্ট ও মুগডালের ক্যারি। বিকাল ৪টায় রান্না শেষ হলে সবাই একসঙ্গে খেতে বসি। খাওয়া শেষে শুরু করি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, কৌতুক ও অন্যের নকল অভিনয়ে আসরে বাঁধ ভাঙা হাসির জোয়ার বইতে থাকে।

অনুষ্ঠানে আরেকটি চমকপ্রদ বিষয় ছিল র‌্যাফেল ড্র। লটারিতে সেরা ১০টি বিজয়ী পুরস্কার ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পুকুর পাড়ে বন্ধুদের সবার অংশগ্রহণে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। হারিয়ে যাওয়া কোনো জিনিস ফিরে পেলে মানুষ যেমন আনন্দিত হয়, আমরাও সবাই একত্র হয়ে তেমনি আনন্দিত হয়েছিলাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই পরিবর্তিত হয়ে কিন্তু রয়ে যায় বন্ধুত্বের বন্ধনটুকু। মানুষ যেখানে প্রাণ খুলে কথা বলে তা হলো বন্ধুত্বের আড্ডা। বন্ধুরা আছে বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন হয়েছে রঙিন ও পথচলা হয়ে মসৃণ। যুগ-যুগান্তরে আমাদের বন্ধুত্বের পথ চলা অব্যাহত থাকুক। অটুট থাকুক নিঃস্বার্থ এই বন্ধন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close