মোহাম্মদ অংকন

  ০৩ জুলাই, ২০২২

ত্রাণ নিয়ে ছুটে চলা তরুণ মিদহাদ আহমদ

সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লন্ডনখ্যাত সিলেট নগরী। সিলেট-সুনামগঞ্জের ৮০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি। যে সিলেটবাসী দেশের যেকোনো বড় ধরনের দুর্যোগে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, এবার তারাই যেন মহাবিপদের মুখোমুখি। এই বিপদ থেকে উত্তোরণে সরকারের পাশাপাশি বেশ কিছু তরুণ যারা কিনা স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ফান্ডিং করে লাখ লাখ টাকার ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছে সিলেটের বন্যার্তদের পাশে। তাদেরই মধ্যে এক তরুণের নাম মিদহাদ আহমদ। তিনি সিলেট নগরীর এমসি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা আলী আহমদ ও মাতা রুজি আহমদের প্রথম সন্তান।

উপশহর মিরাবাজার যখন প্লাবিত হতে থাকে, মিদহাদ পরিবারকে নিয়ে শহরে বড়বাজারে চাচার বাসায় আশ্রয় নেন। নিজেরা যখন আশ্রয়হীন পড়েন, চারদিকে লাখ লাখ মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসে, তখন এই তরুণ শিক্ষার্থী তার টিউশনির পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কয়েকটি পরিবারের জন্য ত্রাণ নিয়ে ছুটে যান ফেলে আসা নিজ এলাকায়। কিন্তু সেখানে যে দৃশ্য তার চোখে পড়ে, তাকে যেন মর্মাহত করে তোলে। ২০ বছরের জীবনে এমন ভয়াবহতা কখনো চোখে পড়েনি তার।

নিজ এলাকার মানুষের জন্য কিছু একটা করা দরকার, এই ঐতিহ্যবোধ থেকে মিদহাদ আহমদ শহরে ফিরে এসে স্যোশাল মিডিয়ায় ডোনেশন চাইতে থাকে। সে পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করায় ‘মিদহাদ মনোগ্রাফ’ নামের একটা গ্রুপ আছে, যেখানে ডোনেশন চেয়ে পোস্ট করতেই ব্যাপক সাড়া পেতে শুরু করে। প্রথম ঘণ্টাতেই ওঠে আসে ১০ হাজার টাকা। ধীরে ধীরে মিদহাদের মনোবল বাড়তে থাকে। সে চিন্তা করে, আগামীকাল এই যৎসামান্য টাকা দিয়ে অন্তত কয়েকজনের শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবে। ভাগ্যক্রমে রাতারাতি ঘণ্টায় টাকাটা বেড়ে ১০ গুণ হয়ে যায়!

মিদহাদ বলেন, ‘এক লাখ টাকা হাতে আসার পর আমার দায়িত্বটাও এক লাখ গুণ বেড়ে যায়। পরের দিন ৫০০ প্যাকেট মোরগ-পোলাও ও সিদ্ধ ডিম নিয়ে গোলাপগঞ্জের বাঘার রোস্তমপুর এলাকায় যাই। সেখানে এর আগে কোনো ত্রাণ যায়নি। দুপুর দেড়টায় নৌকা ভাড়া করে খাবার বিতরণ করা শুরু করলেও শেষ হতে রাত নেমে আসে। এরপরের দিন এক হাজার কেজি চাল ১০০ জনের মাঝে বিতরণ করি গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের চক দৌলতপুর গ্রামে। তারপরের দিন ৩০০ পরিবারের দুদিনের শুকনো খাবার বিতরণ করি গোয়াইনঘাটে। প্রতি প্যাকেটে ছিল চিড়া, মুড়ি ও গুড়।’ মিদহাদের এসব কার্যক্রম চোখে পড়ায় ক্রমশ ডোনেশনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। টাকার অঙ্ক ছাড়িয়ে যায় দুই লাখ। তিনি যেন আরো বড় কিছু করার সাহস সঞ্চার করেন। এই তরুণ আরো বলেন, ‘পরের ধাপে আরেক লাখ টাকা পাওয়ায় আমি ৮০ পরিবারের এক সপ্তাহের খাবারের প্যাকেট তৈরি করি। প্যাকেটে ছিল চাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ছোলার ডাল, লবণ, সাবান, স্যালাইন ও মুড়ি। মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওর বেষ্টিত এলাকায় বিতরণ করি।’ মায়ের অনুপ্রেরণায় মানুষের জন্য ছুটে চলা মিদহাদের সঙ্গে অক্লান্তভাবে সময় ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছেন জুনাইদ আবির, আরিয়ান রাহিন, রাফাত নিশান, আবদুল্লাহ এনাম, আফজাল নাদির, হাবীব রহমানসহ অনেকে। এখন তার ইচ্ছা, পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা পেলে অন্তত সাতটা মেডিকেল ক্যাম্পিং করা। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, বন্যায় পানিবাহিত নানা রোগে মানুষজন আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ নিশ্চিত করা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close