মাবিয়া ইয়াসমিন

  ২৫ অক্টোবর, ২০২১

স্বপ্নবাজ তরুণ প্লাবন আমিন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসে গ্লাস ইঞ্জিনিয়ারিং সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী প্লাবন আমিন একজন স্বপ্নবাজ তরুণ। ক্যামেরার পেছনের মানুষ। হাতে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তরে। প্রকৃতি ও জীবনবোধকে ফ্রেমবন্দি করা তার নেশা। ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মানুষের বিপদের কথা কানে আসলেই ছুটে যান অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কাছে দূরের সুজন ও স্বজনের কাছে ছবির কারিগর নামেই পরিচিত। ক্যামেরায় ক্লিক ক্লিক শব্দের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম হতেই এ নামের সূত্রপাত। একজন কবির যেমন অহর্নিশ ভাবনায় খেলে কবিতার শব্দ ছন্দের খেলা। তেমনি তার মস্তিষ্কে খেলে সৃষ্টিশীল ছবির নান্দনিক আইডিয়া। অদ্ভুত এক নেশায় ছবির নেশায় মত্ত তিনি। তিনি ছবি তুলতে ভালোবাসেন, ছবির গল্প বলতে ভালোবাসেন। ফটোগ্রাফির বিভিন্ন ধারায় তার সবচেয়ে প্রিয় স্ট্রিট ফটোগ্রাফি। দেশ এবং বিদেশি ফটোগ্রাফারের ছবি দেখেন নিয়মিত। ছোট বেলা থেকেই তার বন্ধুরা বিকাল বেলা খেলতে বের হতো তিনি তখন বের হতেন ছবি তুলতে আপন মনে। যদিও তখন তার নিজস্ব কোনো ক্যামেরা ছিল না ধার করা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিল একমাত্র ভরসা।

প্লাবন আমিন বলেন, ‘আমি খুব ছোট বেলা থেকেই ক্যামেরা ও ছবির প্রতি অদ্ভুত এক টান অনুভব করি, বলতে পারেন এই একটি কাজ আমি মন থেকে যতেœর সঙ্গে করি। খুব ছোট বেলায় গ্রামের পাশে বিখ্যাত পরিচালক আবু সাঈদের শুটিংয়ে গিয়ে ক্যামেরা লেন্স দেখতাম। পত্রিকায় পাতা থেকে সুন্দর ছবি কাঁচি দিয়ে কেটে ডাইরির মধ্যে সযতেœ আগলে রাখতাম। বন্ধুরা বিকালে খেলায় মত্ত থাকত আর আমি ক্যামেরায় বুঁদ হয়ে থাকতাম। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপকতার এই সময়ে তরুণ প্রজন্মের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা অত্যন্ত জরুরি’।

ছবির এই কারিগরের পুরো নাম এস এম আরিফুল আমিন প্লাবন। সবাই চেনে প্লাবন আমিন নামেই। পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার (যমুনা নদীভাঙন কবলিত) পুখরিয়া গ্রামে। ছবি তোলার শুরুর গল্প কিছুটা ধূসর। মাত্র আট বছর বয়সে প্রথম ক্যামেরার প্রেমে পড়েন তিনি। শহর থেকে বেড়াতে আসা কাজিনের ক্যামেরা প্রথমবারের মতো হাতে নেওয়ার সৌভাগ্য হয়। সেই থেকেই ক্যামেরার প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করেন। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফটোগ্রাফিতে প্রবেশ করেন তিনি। ছোট বেলায় বাটন ফোনের ক্যামেরায় ছবি তোলায় হাতেখড়ি। ফটোগ্রাফিতে আসার পেছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি শিল্পমনা মানুষ, স্বামীকে বুঝিয়ে সন্তানের জন্য প্রথম ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছিলেন। শিক্ষক পিতা সন্তানের শখের প্রতি সায় দিয়ে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন ক্যামেরা। তারপর থেকে ক্যামেরার নিয়নের আলোয় খুঁজে পেয়েছেন স্বপ্নের ঠিকানা। প্লাবন আমিন গর্ববোধ করেন যে, তিনি একজন ফটোগ্রাফার। তার পরিচিত ব্যাপকতা পেয়েছে নবীন ফটোগ্রাফার হিসেবে।

তার ছবি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। দেশি-বিদেশি শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত ছাপা হচ্ছে তার তোলা নান্দনিক সব ছবি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ তার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে করেছে আরো সমৃদ্ধ।

নিজ উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। ধুনট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক তিনি। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র প্লাবন আমিনের আরেকটি গুণ রয়েছে আর তা হচ্ছে আপাদমস্তক একজন স্বেচ্ছাসেবক তিনি। ছোট বেলা থেকেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। বৃক্ষ রোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ভূমিকা পালন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ত্রাণ বিতরণ, হুইলচেয়ার বিতরণ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সাদা ছড়ি বিতরণ, এমন বহুবিদ কাজ করে যাচ্ছেন তিনি নিরন্তরভাবে। বইপ্রেমী এই ফটোগ্রাফার নিজের শিক্ষক দাদার নামে গড়ে তুলেছেন ‘আবদুর রহমান স্মৃতি গ্রন্থাগার’। করোনার শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, কখনো মাস্ক বিতরণ, স্যানিটাইজার বিতরণ, করোনা সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা, এমনকি তিনি করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন টিমেরও একজন সদস্য। বগুড়ার ধুনট উপজেলার করোনা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘করোনা ও ধুনট পরিস্থিতি’-এর একজন লাশ দাফন সম্পন্ন করা টিমের সদস্য। রক্তের প্রয়োজনে তিনি সর্বদা প্রস্তুত, বিনামূল্যে রোগীর জন্য রক্তের ব্যবস্থা করে দেন।

তার চাওয়া ছবি হোক সমাজের আয়না। তার নিজ হাতে গড়ে তোলা সংগঠন ধুনট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি এক দিন বিশ্বমানের একটি সংগঠন হিসেবে উপস্থিত হবে। ছবি সময়ের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা বলুক। ছবি হোক মুক্ত প্রাণের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ভবিষ্যতে এই তরুণ ফটোগ্রাফার দেশের জন্য কাজ করতে চান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close