প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ মার্চ, ২০২৪

ক্ষমতা পাকাপোক্ত হচ্ছে পুতিনের, পশ্চিমে উদ্বেগ

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে ভ্লাদিমির পুতিন আরো ছয় বছর ক্ষমতায় থাকতে চলেছেন। শুক্র থেকে রবিবার পর্যন্ত চলবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় তেমন কোনো নাটকীয় চমক নেই। আসলে নির্বাচন শেষে তিনি কী করতে যাচ্ছেন সেটাই এখন মনোযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুতিন আরো এক মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করে কী করতে পারেন তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা।

এক প্রতিবেদনে এপি জানিয়েছে, রাশিয়ায় ভোটদান শেষ হচ্ছে রবিবার এবং এটা নিশ্চিত যে এর ফলে পুতিন ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। আর তার অর্থ হচ্ছে তিনি প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা তিরিশ বছর রাশিয়ার নেতৃত্ব দিতে চলেছেন। এ পর্যন্ত তিনি যে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং দেশের ভেতরে বিরোধী কণ্ঠকে কার্যকরভাবে রোধ করেছেন, তাতে পুতিনের হাত আরো শক্ত হয়েছে এবং সম্ভবত অনিয়ন্ত্রিত থেকেছে।

এই অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে রুশ অর্থনীতির বিস্ময়কর স্থিতিস্থাপকতার কারণে। যদিও ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এতে রাশিয়ার অর্থনীতির খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুদ্ধক্ষেত্রে মস্কোর ক্রমবর্ধমান এবং নিয়মিত অগ্রগতিও রাশিয়াকে শক্তিশালী করেছে, যেমন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের তরফ থেকে কিয়েভের প্রতি সামরিক সহায়তার অনিশ্চিত অবস্থা। একই সঙ্গে, কোন কোন পশ্চিমি দেশে প্রগতিশীল সামাজিক নীতির বিরোধিতা বস্তুত পুতিনের ‘ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ’-এর কথারই প্রতিধ্বনি। সংক্ষেপে বলা যায়, খুব কম দৃশ্যমান বাধা নিয়ে পুতিন তার নতুন মেয়াদ শুরু করতে যাচ্ছেন, যার ফলে শিগগিরই গুরুত্বপূর্ণ নতুন কর্ম তৎপরতা দেখা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্রাইন রোজেনফিল্ড, যিনি কমিউনিজমণ্ডউত্তর সময়ের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি এক মন্তব্যে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় যেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এরপর কী হবে। জনপ্রিয় নয় এমন সব পদক্ষেপ পুতিন প্রায়শই নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিত রাখেন।

দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় যে পদক্ষপটি তিনি নিতে পারেন তা হলো ইউক্রেনে লড়াই করার জন্য দ্বিতীয়বার রিজার্ভে থাকা সৈন্যদের যুদ্ধে পাঠানোর জন্য ডাকা। প্রথমবার যখন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি এটি করেছিলেন, তখন এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল এবং যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান এড়াতে একদল রুশ নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। তবে এই দ্বিতীয়বার সৈন্য সমাবেশ ঘটানো জনগণের কাছে যতই অগ্রহণযোগ্য হোক না কেন, ১৮ মাস আগে যে সৈন্যদের যুদ্ধে পাঠানো হয়েছিল তাদের স্বজনরা খানিকটা প্রশমিত বোধ করবেন। রাশিয়ায় কেউ কেউ মনে করেন তাই-ই হবে। গবেষণা গোষ্ঠী র‌্যান্ড করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান মাইকেল জেনকিন্স বলেন, রাশিয়ার নেতারা এখন, ‘তাদের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে গোটা রুশ সমাজকে সংঘবদ্ধ করার’ কথা বলছেন।

তিনি আরো বলেন, এই বাক্যাংশের সুনির্দিষ্ট অর্থটা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়, তবে এতে বোঝানো হচ্ছে যে রাশিয়ার নেতৃত্ব যেন এটা বোঝেন যে, পুতিনের এই যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলবে আর সে জন্যই সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। অন্য কথায়, রাশিয়ার সমাজকে সব সময়ে যুদ্ধের জন্য সংগঠিত থাকতে হবে। তবে কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের একজন সিনিয়র ফেলো তাতিয়ানা স্ট্যানোভায়া বলছেন, পুতিনের ঠিক ওইভাবে যুদ্ধের জন্য লোকজনকে সংগঠিত করানোর প্রয়োজন নেই, কারণ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এলাকা থেকে বহু রুশ নাগরিক যুদ্ধের জন্য স্বেচ্ছায় নাম স্বাক্ষর করেছেন। যাতে তারা বাড়িতে বসে সীমিত সুযোগে যা উপার্জন করেন তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close