প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৩ মার্চ, ২০২৪

রাখাইনে জান্তাবিদ্রোহী ব্যাপক সংঘর্ষ

নিহত ১২, পালাচ্ছে হাজারো মানুষ

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনের একটি ব্যস্ত বাজারে সামরিক বাহিনীর গোলাবর্ষণে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে আহত হয়েছে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ। শুক্রবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের বেশ কিছু এলাকা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে এই গোষ্ঠীটি।

আরাকান আর্মির হাইকমান্ড জানিয়েছে, রাখাইনের রাজধানী ও বন্দরনগরী সিত্তের কাছে একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে সামরিক বাহিনী। শুক্রবার সেই জাহাজ থেকে সিত্তের নিকটবর্তী মিওমা বাজারকে লক্ষ্য করে একের পর এক গোলা নিক্ষেপ করা হয়। তার জেরেই ঘটেছে এসব হতাহতের ঘটনা।

ক্ষমতাসীন জান্তা অবশ্য উল্টো তথ্য দিয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল মায়াবতীতে একটি বিবৃতি প্রদান করেছে সামরিক সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, মিওমা বাজারে গোলাবর্ষণ করেছে আরকান আর্মি। আরো বলা হয়েছে, এ হামলায় নিহত ও আহতের সংখ্যা সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দুপক্ষের দাবি, স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। এর একটি বড় কারণ, কয়েক দিন ধরে সিত্তে এবং রাখাইনের অন্যান্য শহরে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডেটাপ্রবাহ সীমিত করেছে জান্তা। ফলে রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি-সংক্রান্ত হালনাগাদ অধিকাংশ তথ্যই জানা যাচ্ছে না।

এদিকে, রাখাইনের রাজধানী সিত্তের শহুরে এবং গ্রামাঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) যেকোনো সময় সিত্তেতে হামলা চালাতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ।

স্থানীয় এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, আরাকান আর্মি সিত্তে দখল করতে পারে এমন খবর শোনার পর মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা স্বাধীন অঞ্চলগুলোতে যাচ্ছেন। ইয়াঙ্গুন-সিত্তে মহাসড়কে অবস্থিত আহ মিয়ান্ট কায়ুন মিন চং সেতুটি মাইন দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। মূলত আরাকান আর্মির যোদ্ধারা যেন সিত্তেতে প্রবেশ করতে না পারেন সেটি নিশ্চিতে সেতুটি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। এতে করে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘গুরুত্বপূর্ণ ওই সেতুটি উড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত এখানকার বাসিন্দাদের আটকে ফেলা হয়েছে। যদি যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে যুদ্ধ থেকে কীভাবে পালাবে এ নিয়ে মানুষ শঙ্কিত। এ কারণে মানুষ এখন পালিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেরাই সময়টি ব্যবহার করছে।’ যোগ করেন ওই বাসিন্দা। নারিনজারা নিউজ জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পরিবারের সদস্যরাও সিত্তে ছেড়েছেন।

বর্তমানে সিত্তের বাসিন্দার এক-তৃতীয়াংশ সেখানে অবস্থান করছে। যারা রয়ে গেছে, তাদের মধ্যে কেউ আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়, কেউ বৃদ্ধ আবার কেউ কেউ নিজেদের মালপত্র চুরি নিয়ে চিন্তিত। যারা পালিয়েছে তাদের বেশির ভাগ নৌকা ব্যবহার করে অন্যত্র সরে গেছে। সিত্তেতে নদীর এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে এখন জনপ্রতি ৫০ হাজার কিয়েট খরচ করা লাগছে।

তবে জান্তাবাহিনী সাধারণ মানুষকে পালানোর ক্ষেত্রেও বাধা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্য এক বাসিন্দা। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, যদি আরাকান আর্মি হামলা চালায় তাহলে যেন বেসামরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সেনারা পালাতে পারে, সেজন্য সাধারণ মানুষকে পালাতে দেওয়া হচ্ছে না।

একজন সামাজিককর্মী পালিয়ে যাওয়া মানুষদের পরামর্শ দিয়েছে যেন তারা পর্যাপ্ত খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত থাকেন।

সূত্র : নারিনজারা নিউজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close