প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ মে, ২০২২

এক সর্বনাশা প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের গান লবি

টেক্সাসের একটি প্রাথমিক স্কুলে নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনায় আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ‘গান লবি’ আলোচনায় এসেছে। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১২ সালে স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে ২০ শিশু ও ৬ প্রাপ্তবয়স্ক নিহত হয়। গত মঙ্গলবারের হামলাতেও ১৯ শিশুসহ ২১ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ওবামা বলেছেন, গান লবি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারালাইজড করেছে।

হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির ডেমোক্র্যাটি চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ টুইটারে লিখেছেন, শিশুরা মরছে। কিন্তু রিপাবলিকানরা গান লবির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাজি না।

‘গান লবি’ কী : যুক্তরাষ্ট্রে ‘গান লবি’ একটি অস্ত্র নীতি ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার। এর প্রভাবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের বিরোধিতাকারী আইনপ্রণেতাদের সরাসরি তহবিল প্রদান, নির্বাচিত কর্মকর্তাদের স্বতন্ত্রভাবে সহযোগিতা এবং আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট জনমত নিজেদের পক্ষে নিতে প্রচারণা। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী অর্থ আইন এড়াতে প্রায়ই এমন লবিং খুব সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়।

বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণবিরোধী বড় লবিং গোষ্ঠীগুলো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শতকোটি ডলারের অস্ত্র শিল্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এনআরএ ও একই ধরনের গোষ্ঠীগুলো নিজেদের নাগরিক অধিকার রক্ষাকারী হিসেবে দাবি করে। এক্ষেত্রে তারা মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর কথা তুলে ধরে। যাতে নাগরিকদের ‘অস্ত্র রাখা ও বহনের অধিকার’ দেওয়া হয়েছে।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ পক্ষের গোষ্ঠীগুলোর একটি গিফর্ড অর্গানাইজেশন। সাবেক মার্কিন কংগ্রেস উইম্যান ও বন্দুক সহিংসতার শিকার গ্যাবি গিফর্ড এটি গড়ে তুলেছেন। সংস্থাটির অভিযোগ, এনআরএ লবিস্টরা শুধু বেশিসংখ্যক অস্ত্র বিক্রিতে আগ্রহী এবং গান লবি কর্মকর্তাদের এটিই চূড়ান্ত কথা।

বন্দুক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা মানুষেরা ফেডারেল অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ পাস না হওয়ার জন্য লবিটির ক্ষমতাকে দীর্ঘদিন ধরে দায়ী করে আসছেন। তারা দেশজুড়ে রিপাবলিকান প্রভাবিত অঙ্গরাজ্যগুলোর অস্ত্র নিয়ে শিথিল বিধিনিষেধকেও দায়ী করছেন।

গান লবির প্রভাব পরিমাপ করা কঠিন। এই গোষ্ঠীটি দেশজুড়ে রাজনৈতিক ও প্রার্থীদের সমর্থনে লাখো ডলার ব্যয় করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা আর্থিক সংকটে পড়া এনআরএ দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিকদের গ্রেডিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে এবং নিজেদের স্বার্থে বিজ্ঞাপনী প্রচারণা বাস্তবায়ন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ব্যয় নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওপেনসিক্রেটসের মতে, ১৯৯৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বন্দুকপন্থী গোষ্ঠীগুলো লবিংয়ের পেছনে ব্যয় করেছে ১৭১.৯ মিলিয়ন ডলার। আইনপ্রণয়ন প্রভাবিত করতে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এনআরএ একাই এই খাতে ব্যয় করেছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৪ ডলার।

ওপেনসিক্রেটসের মতে, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তথাকথিত বাইরের খরচ হিসেবে ব্যয় করেছে ১৫৫.১ মিলিয়ন ডলার। ২০০০ সাল থেকে এনআরএ-এর এমন ব্যয় ছিল ১৪০ মিলিয়ন ডলার। এগুলোর মধ্যে সেই ব্যয় রয়েছে যা সরাসরি প্রার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যয় করা হয়নি। প্রার্থীদের সরাসরি তহবিল প্রদানের সীমা থাকলেও বাইরের খরচে কোনো সীমা রেখা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close