প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১২ মে, ২০২২

দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। শিগগির এ সংঘাত শেষ হচ্ছে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। খবর বিবিসির।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। সেখানকার ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই সতর্কতা দেওয়া হলো।

রাজধানী কিয়েভ দখলে রুশ বাহিনীর প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা। এরপরই ডনবাস অঞ্চল দখলে ওপর জোর দিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এত কিছুর পরও রুশ বাহিনী আসলে অচলাবস্থায় রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক এভ্রিল হেইনস মঙ্গলবার মার্কিন সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেন, পুতিন এখনো ডনবাসের বাইরেও তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চান। কিন্তু তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা নেই।

তিনি আরো বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট সম্ভবত বুঝতে পারেননি যে, ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ এভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে। রাশিয়া এখন চাপে পড়েছে। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে, খাদ্য এবং অন্য জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে।

যুদ্ধ চলতে থাকায় পুতিন হয়তো আরো কঠোর হয়ে উঠতে পারেন। এমনকি অস্তিত্বের হুমকি মনে হলে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্রও ব্যবহার করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক স্কট বেরিয়ার একই শুনানিতে বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন কিছুটা অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে।

সর্বশেষ লড়াইয়ে উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের চারটি এলাকা পুনর্দখল করার দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, চেরকাসি টাইশকি, রুস্কি টাইশকি, রুবিঝনে এবং বায়রাক অঞ্চল রাশিয়ার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের সাফল্য ক্রমান্বয়ে রুশ বাহিনীকে খারকিভ থেকে চলে যেতে বাধ্য করছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।

পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ রাশিয়ার দখলে : প্রায় আড়াই মাস ধরে প্রতিবেশী ইউক্রেইনে চলা রাশিয়ার সামরিক অভিযান বিভিন্ন অব্যবস্থার কারণে বারবার থমকে গেলেও হালের ভৌগোলিক বাস্তবতায় রুশ বাহিনীর অগ্রগতির চিত্রই ফুটে উঠছে।

মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেইনে লড়াইরত তাদের বাহিনীগুলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের মধ্যবর্তী সীমান্ত পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।

ইউক্রেনের রুশভাষী এই প্রদেশে দুটো তো মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ৮ বছর ধরে দেশটির সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, রাশিয়ার মন্ত্রণালয়টির ভাষ্য সঠিক হলে দনবাস নামে পরিচিত অঞ্চলটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ শিগগিরই রাশিয়ার হাতে চলে যাচ্ছে, এ অনুমান আরো জোরদার হবে।

২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেইন অভিযান শুরুর আগে দনবাসের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চলটির রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, অভিযানের শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøলাদিমির পুতিন কিইভসহ ইউক্রেইনের বিরাট অংশ দ্রুত ও সহজে দখলে নেওয়া এবং সরকার ফেলে দিয়ে অনুগত কাউকে ক্ষমতায় বসানোর যে পরিকল্পনা করেছিলেন দনবাসের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ সে তুলনায় সামান্যই।

তবে এই অংশের ভৌগোলিক গুরুত্ব একেবারে কম না। অভিযানের শুরুর দিকে রাশিয়া ক্রাইমিয়াসংলগ্ন ইউক্রেইনের দক্ষিণের কিছু অংশেরও দখল নিয়েছিল। এর সঙ্গে দনবাসের নিয়ন্ত্রণ সংঘাত বন্ধে ভবিষ্যতে যেকোনো দর-কষাকষির আলোচনায় ক্রেমলিনকে ব্যাপক সুবিধা দেবে।

ইউক্রেনকে আরো চার হাজার কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : ইউক্রেনকে আরো চার হাজার কোটি ডলারের সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে এ-সংক্রান্ত একটি বিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রতিনিধি পরিষদে বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছে ৩৬৮ জন এবং বিপক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ৫৭টি। এই বিলটি এখন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। কয়েক আগেই ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য ৩ হাজার ৩০০ কোটি অতিরিক্ত সহায়তায় অনুমোদন দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু মার্কিন আইনপ্রণেতারা এই সামরিক ও মানবিক সহায়তা তহবিল আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ইউক্রেনের জন্য এই সহায়তা প্যাকেজে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জামসহ ৬০০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা পাঠানো হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close