প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২২

ইউক্রেনে ক্ষমতায় বসছেন রুশপন্থি নেতা!

অভিযোগ পশ্চিমাদের

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে চায় রাশিয়া-এমন দাবি পশ্চিমাদের। এ নিয়ে উত্তপ্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গন। এবার মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাজ্য। তারা বলছে, কিয়েভে রুশপন্থি নেতাকে ক্ষমতায় বসানোর লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র করছে মস্কো। ইউক্রেনে আগ্রাসন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটির একাধিক সাবেক রাজনীতিকের সঙ্গে যোগসাজশ করছেন রাশিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। শনিবার এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ করেছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

দীর্ঘ সময় ধরে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে ক্রেমলিন। দেশটিতে সামরিক অভিযানের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে দাবি করে আসছে মস্কো। তবে এ কথা বিশ্বাস করতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এ নিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে দফায় দফায় চলছে আলোচনা। গত শুক্রবারই সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ আনল যুক্তরাজ্য।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, কিয়েভে সম্ভাব্য রুশপন্থি সরকারের প্রধান হিসেবে ইউক্রেনের সাবেক আইনপ্রণেতা ইয়েভহেন মুরাইয়েভকে বিবেচনা করছে রাশিয়া। এ-সংক্রান্ত তথ্য যুক্তরাজ্যের কাছে আছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি যুক্তরাজ্য।

ইউক্রেনে রুশপন্থি সরকার বসাতে রাশিয়া ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ এনে টুইটারে একটি পোস্ট দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রস। টুইটে তিনি বলেন, ইউক্রেনে রুশপন্থি নেতৃত্বকে ক্ষমতায় বসাতে ক্রেমলিনের চক্রান্ত তারা কোনোভাবেই সহ্য করবেন না। ক্রেমলিন জানে যে সামরিক অনুপ্রবেশ কৌশলগতভাবে একটি বড় ভুল হবে। তার জন্য রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে আরো অভিযোগ করা হয়েছে যে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইউক্রেনের বেশ কয়েকজন সাবেক রাজনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন রুশ গোয়েন্দারা।

যুক্তরাজ্যের এমন অভিযোগের পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি রাশিয়া। তবে এই অভিযোগ সম্পর্কে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম অবজারভারকে ইউক্রেনের সাবেক আইনপ্রণেতা ইয়েভহেন মুরাইয়েভ বলেন, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্ত মনে হচ্ছে। তারা যে অভিযোগ তুলেছে, তা যৌক্তিক নয়। তাকে রাশিয়া নিষিদ্ধ করেছে। শুধু তাণ্ডই নয়, দেশটিতে তার বাবার অর্থও জব্দ করা হয়েছে।

৪৫ বছর বয়সি ইয়েভহেন মুরাইয়েভ রুশপন্থি রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। পশ্চিমাদের সঙ্গে ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠতার বিরোধী তিনি। গত ডিসেম্বরে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চালানো জরিপে ইউক্রেনে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় মুরাইয়েভের নাম সপ্তম স্থানে উঠে আসে।। তার পক্ষে জনসমর্থন ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে আগ্রহী ইউক্রেন। তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে মস্কোর। এই আপত্তির কারণেই ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে কথা উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কূটনীতিকদের সর্বশেষ বৈঠকেও। বৈঠকে ক্রেমলিন বলেছে, ইউক্রেনকে কোনোভাবেই ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না।

ইউক্রেনে ‘প্রাণঘাতী’ সামরিক সরঞ্জাম পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র : রাশিয়া আক্রমণ চালাতে পারে- এমন আশঙ্কার মধ্যে ইউক্রেনে প্রাণঘাতী ‘সামরিক সরঞ্জাম’ পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র। ৯০ টন ওজনের ওই সামরিক সহায়তার প্রথম চালান এরই মধ্যে ইউক্রেনে পৌঁছেছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ওই সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।

ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়টি সম্প্রতি অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। ওই সামরিক সহায়তার মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরক্ষার জন্য গোলাবারুদ রয়েছে। চলতি সপ্তাহেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কিয়েভ সফরে যাওয়ার কথা। এর আগেই ওই সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হলো।

বেশ কিছু দিন ধরে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ করেছে ক্রেমলিন। যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা, ইউক্রেনে হামলা চালাতেই রাশিয়ার এই প্রস্তুতি। যদিও মস্কো ওই সেনা সমাবেশকে রুটিন কাজের অংশ বলে দাবি করে আসছে। ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনা কমাতে গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ওই বৈঠকের পর দেশ দুটি জানায়, তারা ইউক্রেন ইস্যুতে চলমান উত্তেজনা হ্রাসের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

তবে ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রশ্নে ব্লিংকেন সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেছেন। ইউক্রেনে হামলা চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো সমন্বিতভাবে পাল্টা আক্রমণ চালাবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এ বৈঠকের পর সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ব্লিংকেনকে তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তাসংক্রান্ত যেসব দাবি মস্কো জানিয়েছে, ওয়াশিংটন যদি তা উপেক্ষা করে, তবে চড়া মূল্য দিতে হবে।

বাইডেন গত ডিসেম্বরে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা সহায়তার জন্য ২০ কোটি মার্কিন ডলার অনুমোদন দেন। কিয়েভে মার্কিন দূতাবাস ফেসবুক পোস্টে বলেছে, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এই চালান এসেছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে এ রকম সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close