আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নাফটা চুক্তি নিয়ে চাপের মুখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী

নবায়ন করতে রাজি হতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে দেশটির ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক নেতারা। একই সঙ্গে খারাপ চুক্তির চেয়ে কোনো চুক্তি না থাকাই ভালোÑ এমন নীতিও পরিত্যাগ করতে বলছেন তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বুধবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইথিজারের সঙ্গে নাফটা চুক্তির বিষয়ে নতুন আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। কারণ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বিষয়ে বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে। আর ট্রুডো বলেছেন, তার লিবারেল সরকার দরকার পড়লে পদত্যাগ করবে। এখন পর্যন্ত কানাডার অবস্থানের প্রতি অভ্যন্তরীণ সমর্থন থাকলেও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কায় তা কমছে। কানাডা তাদের পণ্যের ৭৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে থাকে। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পণ্যের ওপর কর আরোপের হুমকি দিচ্ছেন। ফ্রিল্যান্ড কানাডার অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মঙ্গলবার বলেন, ‘আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া কোনো আলোচনাকারী যদি মনে করে তাকে যেকোনও মূল্যে একটি চুক্তি করতেই হবে, তাহলে ওই চুক্তির জন্য তাকে সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হয়।’

তবে কানাডার বিজনেস কাউন্সিলের প্রধান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী জন ম্যানলি বলেন, খারাপ চুক্তির চেয়ে কোনো চুক্তি না হওয়া ভালোÑ এমন সাহসী বক্তব্যের দুর্বলতা হলো, একটি খারাপ চুক্তি দর্শকের খুব নজরে থাকে। মঙ্গলবার টেলিফোন ম্যানলি বলেন, যারা ভাবছেন নাফটা চুক্তির চেয়ে আমরা আরো ভালো কিছু পেতে যাচ্ছি তারা ঘোরের মধ্যে আছেন। আমরা জানি, এটা করাই হচ্ছে কিছু সুবিধা কেড়ে নেওয়ার জন্য।

ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই নাফটা চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন। তার অভিযোগ, চুক্তিটির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনগত চাকরি কমে গেছে। বিষয়টিতে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে তিনি তা বাতিল করে দেবেন বলেও ক্ষমতায় আসার পর থেকে হুমকি দিয়ে আসছেন। গত মাসে তিনি মেক্সিকোর সঙ্গে নাফটা চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। আর পরিষ্কার করে জানিয়েছে, দরকার পড়লে তারা চুক্তিটি থেকে কানাডাকে বাদ দেবে।

কানাডার ডেইরি খাতে উচ্চ করের বিষয়টি উল্লেখ করে ট্রাম্প মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কানাডা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশ থেকে সুবিধা নিয়ে আসছে। আমরা কানাডাকে ভালবাসি কিন্তু তারা এমন অবস্থান নিয়ে আছে যা ভাল অবস্থান নয়।’ মার্কিন আলোচনাকারীরা কানাডার সুরক্ষিত ডেইরি মার্কেটের প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ ওন্টারিওর মুখ্যমন্ত্রী ডোগ ফোর্ড বুধবার কানাডার আলোচনাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজের উদ্বেগের কথা জানাবেন। ওন্টারিও বাণিজ্যমন্ত্রী জিম উইলসন সোমবার বলেন, ‘আপনার সবাই যে গুজবটি শুনছেন আমরাও তা শুনছি। আর তা হলো তারা কোনও চুক্তি চায় না। তাই আমরা সেখানে গিয়ে বলতে চাই, আপনাদের জন্য একটি চুক্তি করা খুবই প্রয়োজন।’

ওন্টারিওতে ভালো করতে না পারলে ২০১৯ সালের অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচনে ট্রুডোর লিবারেল দলের জেতার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এদিকে পশ্চিমাঞ্চলের সাসকাটচিওয়ান প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী স্কট মোয়েও আলোচনা থেকে বের হয়ে আসার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো খারাপ চুক্তি করতে পারব না। তবে আমি নিশ্চিত নই কোনো চুক্তি না করেও থাকতে পারব কিনা।’

ট্রুডো গত সোমবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কানাডার কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মনে করেন না নাফটা চুক্তি থেকে কানাডাকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদন করবে। ম্যানলি বলেন, তার সংগঠনের সদস্যরা এই ভেবে খুবই উদ্বিগ্ন যে, ট্রুডোর দল সম্ভবত কংগ্রেসের ওপর ভরসা করে আছে। ম্যানলি একে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close