আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২১ মে, ২০১৮

পাকিস্তানে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা

সেনাবাহিনী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মধ্যে ক্রমশ সৃষ্টি হতে থাকা দূরত্বের কারণে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নওয়াজ শরিফের দলকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন যত কাছে আসছে, ততই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। এরই মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের দ্বন্দ্ব নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা নিয়ে মন্তব্য করায় এই বিতর্ক তৈরি হয়। তাছাড়া নওয়াজ শরিফ বলেছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক জনগণের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। অনেক সমালোচনার মুখে পড়েও নওয়াজ শরিফ তার এ উক্তি প্রত্যাহার করেননি বা এর জন্য দুঃখ প্রকাশও করেননি।

সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিক এবং বেশকিছু টেলিভিশন বিশ্লেষক নওয়াজের উক্তির জন্য তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিচারের দাবি জানিয়েছে। পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা ইমরান খান বলেছেন, নওয়াজ শরিফকে সংবিধানের ছয় অনুচ্ছেদের আওতায় এনে বিচার করা উচিত। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহিতার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে। নতুন এ ইস্যু পাকিস্তানের গণতন্ত্রপন্থি বেসমারিক সরকার সমর্থক ও সামরিক বাহিনীর সম্পর্কে গভীর খাদ এবং আস্থাহীনতা তৈরি করেছে।

চলতি মে মাসেই পাকিস্তানের বর্তমান সংসদের মেয়াদ ফুরাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছিল, আগামী জুলাইয়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে অনেক পাকিস্তানিরই শঙ্কা রয়েছে। যদিও পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বলছে, এসব শঙ্কা ভিত্তিহীন। কমিশনের মুখপাত্র আলতাফ আহমেদ বলেছেন, সবকিছু সঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং নির্বাচন যথাসময়েই হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যদি ৩১ মে সংসদ ভেঙে দেন, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও যথাসময়ে নির্বাচন আশা করছে। ক্ষমতায় থাকা নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান রাজা জাফর উল হক বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হবে না।

অন্যতম বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের মুখপাত্র চৌধুরী ফাওয়াত হুসেইনও একই কথা বলেছে ডয়চে ভেলেকে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তাহির মেহেদী বলেন, পাকিস্তান কোনোভাবেই নির্বাচন বিলম্বিত করতে পারবে না, কেননা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। পাকিস্তানের সাবেক সংসদ সদস্য এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আহমেদ জারদারির তৎকালীন প্রেস সচিব ফারহাতুল্লাহ বাবর মনে করেন, দেশের ভেতরে একটি অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠী নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা সফল হবে না, বলেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ার ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানে গণতন্ত্র এখনো ভঙ্গুর পথেই হাঁটছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর, দেশটির গণতান্ত্রিকতার ইতিহাসে কয়েক দশক ধরে সামরিক শাসনের নজির রয়েছে। কিছুদিন পরপরই সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন ও নির্বাচিত রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো ২০১৩ সালে নির্বাচিত একটি সরকার, অপর একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় অনেকে সামরিক অভ্যুত্থানের চক্র থেকে পাকিস্তানের রাজনীতির বেরিয়ে আসার লক্ষণ দেখতে পেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

কিন্তু নওয়াজ শরিফ যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত হলেন, তাতে অনেকেই মনে করেন, এর পেছনে সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে। পরিবার সদস্যরা দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে পড়ায় পদত্যাগ করতে হয়েছিল নওয়াজকে। যদিও অনেকেই মনে করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সেনাবাহিনীর বাইরে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টার কারণেই তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানো ছাড়াও নেওয়াজ শরিফের নিজের দলের নেতৃত্ব হারাতে হয়েছিল। পাশাপাশি সব সময়ের জন্য সব ধরনের নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার হারান তিনি। পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে অনেক বিশ্লেষক দেখছেন আরেক দৃষ্টিতে। তারা বলছেন, কোনো ধরনের অভ্যুত্থান ছাড়াই ক্ষমতা চর্চার জন্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ছায়ায় থেকে দেশ শাসনে তারা দক্ষ হয়ে উঠেছে। নওয়াজ শরিফের এ ঘটনা ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর মুখপাত্র জাফর উল হক বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সাধারণ নির্বাচন পাকিস্তানের ভবিতব্য নির্ধারণ করবে।

কেননা, দেশটি এখন নিরাপত্তাজনিত গভীর সংকটে পড়েছে। এমনকি পাকিস্তানের পরম মিত্র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সন্ত্রাসী এলাকা চিহ্নিত করে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় ইসলামাবাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist