আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়ায় মার্কিন জোটের হামলা নিয়ে যা বলছেন বিশ্বনেতারা
ঠিক এক বছর আগে বিরোধীদের ওপর রাসায়নিক হামলার অভিযোগে সিরিয়াতে মিসাইল হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শুক্রবার রাতে আবারও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন তিনি। ট্রাম্পের নির্দেশে দুই মিত্রদেশ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে নিয়ে ব্যাপক মিসাইল হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী।
সিরিয়ায় হামলার পর শনিবার ট্রাম্প টুইটারে বলেন, ‘মিশন সম্পন্ন’। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময়ও এই একই বাক্য ব্যবহার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, যা তাকে একজন জেদি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
মিসাইল হামলা নিয়ে পেন্টাগনের দাবি, সিরিয়ার পূর্ব ঘৌতায় রাসায়নিক হামলার জন্য আসাদবাহিনীকে দায়ী করে বিভিন্ন রাসায়নিক অস্ত্রের স্থাপনাগুলো লক্ষ করে মিসাইল হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। এ সময় রাতভর ১০৫টি মিসাইল ছোড়া হয়। লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল রাজধানী দামেস্কের একটি গবেষণা কেন্দ্র ও হোমসের দুটি অস্ত্র মজুদের স্থাপনা। এ হামলার প্রশংসা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, অভিযানটি ছিল নিখুঁত। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের বিচক্ষণতার জন্য ধন্যবাদ। এর চেয়ে ভালো কিছু হওয়া সম্ভব ছিল না। মার্কিন রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের একটা বড় অংশ ট্রাম্পের বর্তমান কার্যকলাপের সমর্থন জানাচ্ছেন। তবে নীতিনির্ধারকদের আরেকটি দল সাত বছর ধরে চলা সিরিয়া যুদ্ধকে ‘মার্কিন সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অভাব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এই দ্বিতীয় দলেরই একজন রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন।
মিসাইল হামলার পর একটি বিবৃতিতে তিনি জানান, কেবল আকাশপথে হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের মিশনে সফল হওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য সিরিয়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এক বছর আগে সিরিয়ার বাশার সরকারের পতনের জন্য মিসাইল হামলার চেয়েও অনেক বেশি আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছিলেন ম্যাককেইন। এদিকে সিরিয়ায় হামলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। একাধিক পশ্চিমা পরাশক্তির মতে, এ হামলা সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কার্যক্রমের একদম কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে, যদিও তা আসাদবাহিনীকে হটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। সিরিয়ায় আর কোনো সামরিক অভিযানে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও, জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য হিসেবে মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যকে সমর্থন দিয়েছে জার্মানি। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেন, ভবিষ্যতে রাসায়নিক হামলার ব্যাপারে সিরিয়া সরকারকে সতর্ক করতে এ হামলার প্রয়োজন ছিল। এদিকে যুক্তরাজ্য হামলায় অংশ নিলেও, এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে দেশটির বিরোধী লেবার পার্টির নেতারা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র সরকারের এ অভিযানের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। তুরস্ক যে এ হামলার সমর্থন জানাবে, তা হয়তো আগে থেকেই জানতেন বিশ্লেষকরা। সিরিয়ার ওপর মার্কিন হামলাকে ‘সঠিক জবাব’ বলে জানায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সিরিয়ায় হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে চীন
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়ায় হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এদিকে সিরিয়ার আসাদবাহিনীর অন্যতম সহায়ক শক্তি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, এ হামলা বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য। মিত্রদের ওপর কোনো আক্রমণ চালালে রাশিয়াও পাল্টা আক্রমণ চালাবে বলে ঘোষণা দিলেও শুক্রবার রাতের মিসাইল হামলার সময় কোনো রাশিয়ান এয়ার ডিফেন্স ব্যবহৃত হয়নি বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
রাশিয়ার মতো একই পথে হাঁটছে ইরান। দেশটির শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খোমেনি বলেন, এ হামলা অপরাধ ছাড়া আর কিছুই না। আর এ অপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমি পরিষ্কারভাবে অপরাধী বলছি।
"