বান্দরবান প্রতিনিধি

  ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

রুমা-থানচিতে পর্যটনে ধস

ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও বৈসাবি উৎসব ঘিরে বান্দরবানে পর্যটকে সরগরম থাকার কথা ছিল। কিন্তু এ মাসের শুরুর দিকে বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় পরপর ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনায় সেখানে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করে।

এ ঘটনায় অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। এর ভয়ে ও আতঙ্কে পর্যটকরা আগে থেকে করে রাখা হোটেল মোটেল ও রিসোর্টের বুকিং বাতিল করে দেয়। এতে পর্যটনের ভরা মৌসুমে লোকসানের দুশ্চিন্তায় পড়েন পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা। এর পরপরই শুরু হয় তাপপ্রবাহ আর তাপপ্রবাহের পরেই বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে পর্যটনশিল্পে নামে ধস। বর্তমানে সেখানকার হোটেল-রিসোর্ট বলতে গেলে একেবারেই ফাঁকা। দেখা মিলছে না দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।

পার্বত্য এলাকায় পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে আছে বান্দরবান। বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার পর্যটক আকর্ষণের খ্যাতি রয়েছে দেশ বিদেশে। জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার থানচির অবস্থান, রোয়াংছড়ি ২০ কিলোমিটার এবং রুমা ৬৯ কিলোমিটার দূরে। থানচি সড়কের মাঝখানে ম্রো নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত জীবননগর নামক স্থানে রয়েছে নীলগিরি আর আলিকদম উপজেলা সংযোগ সড়কের থানচি সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে ক্রাউডং (মারমা) ডিম পাহাড় (বাংলা), নৌপথে সাংগু নদী বেয়ে তিন্দু ইউনিয়নে রাজা পাথর (বাংলা)। এরপর রেমাক্রী খাল। জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ির শীলবাঁধাপাড়ায় দেবতাখুমের অবস্থান। এ ছাড়া রয়েছে অনেকগুলো পর্যটন স্পট। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিমি দূরে ৩ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে রয়েছে বগালেক। এই লেকটি ১৫ হাজার একর জুড়ে পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল বিজয় (তাজিং ডং) এর উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৫০০ ফুট, রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে অবস্থিত। এ ছাড়া জেলার থানচিতে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে আছে নাফাখুম ঝরনা, আমিয়াখুং ঝরনা, ভেলাখুং ঝরনা, সাত ভাই খুং ঝরনা, লাংলুক ঝরনা, লৈক্ষ্যং ঝরনা, চিংড়িৎ ঝরনাসহ অসংখ্য ঝরনা।

পর্যটনসংশ্লিষ্টরা জানান, বিরাজমান পরিস্থিতিতে এই তিন উপজেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করায় দর্শনীয় স্থানে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে। অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ। যানবাহন চলাচল সীমিত। সন্ধ্যার আগেই লোকজন ঘরবন্দি হয়ে যাচ্ছে।

রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, এবারে ঈদ, বৈসাবি ও পহেলা বৈশাখ ঘিরে হোটেল-মোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হওয়া কথা। কিন্তু গত ২ এপ্রিল রাতে কেএনএফ রুমার সোনালী ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট, ম্যানেজার অপহরণ এবং তার পরের দিন ৩ এপ্রিল দিন দুপুরে থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় অস্থির হয়ে পড়ে বান্দরবান। শুরু হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। আর এই খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে আর লোকজন আসছে না বান্দরবানে।

ব্যবসায়ীরা আরো জানান, পর্যটক না আসায় ঈদ মৌসুমে পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের গুনতে হবে লাখ লাখ টাকার লোকসান। নৌকার মাঝিরা জানান, থানচিতে পর্যটকের ছুটে চলার একমাত্র মাধ্যম নৌকা। যেখানে নৌকার সংখ্যা রয়েছে পাঁচ শতাধিক, চালক রয়েছেন ৫০০ জনের মতো। নৌকা চললে তাদের সংসারের চাকা ঘোরে। কিন্তু বর্তমানে পাহাড় অশান্ত। এমন পরিস্থিতিতে ড্রাইভাররা দিনশেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন বলেন, সরকারিভাবে পর্যটকের নিরুৎসাহিত করা হয়নি, তবে এমন পরিস্থিতি শোনার পরে আর কেউ ঘুরতে আসতে সাহস করছে না। এরই মধ্যে বাংলা নববর্ষ ও সাংগ্রাই অনুষ্ঠানে অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদসরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) শতাধিক অস্ত্রধারী রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসে রুমা উপজেলার ইউএনও অফিসসংলগ্ন মসজিদ ও ব্যাংক ঘেরাও করে। তারা সোনালী ব্যাংকের টাকাসহ ডিউটিরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা যাওয়ার সময় রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকেও অপহরণ করে। পরের দিন বুধবার (৩ এপ্রিল) থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়। রুমার ঘটনার পর যৌথ অভিযান চালিয়ে সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে র‌্যাব ও সেনাবাহিনী। এরপর কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব ঘটনায় ৮টি মামলা করে পুলিশ। ঘটনার পরপরই জড়িতদের ধরতে এবং সন্ত্রাসীদের নির্মূলে ৬ এপ্রিল যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। দুদিনের অভিযানে ১৮ নারীসহ ৫৬ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। বাকি সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close