ফরিদপুর প্রতিনিধি

  ৩০ মার্চ, ২০২৪

৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘কাটাগড়ের মেলা’

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর রুপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়ে শুরু হয়েছে ৩০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ‘কাটাগড়ের মেলা’। স্থানীয় লোকসংস্কৃতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো এ মেলাটি। স্থানীয় সুফি সাধক দেওয়ান শাগের শাহের মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২৬ মার্চ এ মেলা বসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফকির-সন্ন্যাসী, ভক্ত-দর্শনার্থীরা প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। ৫০০ একরের বেশি জায়গার ওপর এ মেলা বসে।

এ বছর মাজারের পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে মেলা বসেছে। মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, ভ্যারাইটি শো, যাত্রাপালা, জাদু, নাগরদোলা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এর পাশাপাশি ফার্নিচার, মিষ্টি, কসমেটিক্স ও খেলনার দোকান বসেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাজারের পাশে প্রায় সহস্র একর এলাকাজুড়ে বসা মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, ভ্যারাইটি শো, যাত্রাপালা, জাদু ও নাগরদোলার কাছে শিশু-কিশোর ভিড় করছে। এছাড়া ফার্নিচার, সাজ-বাতাসা, মিষ্টির দোকান, বাহারি খাবারের দোকান, নানা ধরনের খেলনা নিয়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সাজ-বাতসা ও কদমা ২০০ টাকা কেজি ও রসগোল্লা আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন দেওয়ান শাগের শাহ (রহ.)। ধারণা করা হয়, ১৮ শতকের গোড়ার দিকে কাটাগড়ে আস্তানা গাড়েন তিনি। তার ওফাত দিবসের ওরস উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১২ তারিখ থেকে তিন দিনব্যাপী মেলা শুরু হলেও চলে সপ্তাহব্যাপী।

বনমালীপুর জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নারায়ণ সরকার বলেন, মেলা শুরুর প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই এলাকায় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। মেলার সময় আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ দেওয়া হয়। এলাকার বিবাহিত মেয়েরা স্বামী ও তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে বাবারবাড়িতে বেড়াতে আসে। অতিথিদের আগমনে বাড়িঘরে আনন্দের ধারা বয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ইসরাফিল মোল্লা বলেন, কাটাগড়ের মেলার প্রধান ঐতিহ্য হচ্ছে চিনির তৈরি সাজ-বাতাসা ও কদমা। মেলায় আগতরা মাটির পাতিলে সাজ-বাতাসা ও কদমা কিনেন। সেটি কেনার পরে আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগের শাহের (রহ.) আস্তানার ওপর ছিটিয়ে থাকেন। এভাবে প্রায় কয়েকশত মণ সাজ-বাতাসা ও কদমা কেনাবেচা হয়।

স্থানীয় কলিমাঝি গ্রামের বাসিন্দা এস এম মহব্বত বলেন, প্রতি বছর এ মেলা ঘিরে ওই এলাকায় ভিন্ন রকমের আমেজ সৃষ্টি হয়। কাটাগড়, কলিমাঝি, সূর্যোগ, সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, শেখর, ভাটপাড়া, মাইটকুমরা, গঙ্গানন্দপুর, ছত্রকান্দা, বন্ডপাশা, বয়রা, বামনগাতি, বাজিদাদপুর, টোংরাইল, মোড়া, সুতালীয়া, বনমালীপুর, বিন্নাহুড়ি, ছয় হাজার, কদমী, রুপাপাত, বাউরকান্দিসহ অন্তত আশপাশের কয়েকশত গ্রামে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এ মেলা চলে আসছে। আমার ও আমার বাবা-দাদার জন্মের আগে থেকে এ মেলা চলে আসছে বলে স্থানীয় প্রবীণদের মুখে শুনে আসছি।

রুপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও লাখো মানুষের ভিড় হয়েছে মেলায়। শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, মেলা ঘিরে আশপাশের প্রায় অর্ধশত গ্রামজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ।

মেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউল আজম বাবু মিয়া বলেন, মেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কমিটির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, অসামাজিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতা বন্ধে মেলা কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close