অন্তর দাস, দশমিনা (পটুয়াখালী)

  ২৪ মার্চ, ২০২৪

শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিলে পাওয়া যায় ছুটি, সুযোগ

‘আমি এবং আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’ এমন লেখা রয়েছে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে চিত্র ভিন্ন। একটি ভিডিওতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের চিত্র পাওয়া গেছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে এই শিক্ষা কর্মকর্তাকে টাকা দিলেই মিলে ছুটি। স্কুলে না গিয়েও পাওয়া যায় হাজির সুযোগ।

জানা গেছে, উপজেলায় ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছে শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তিনজন। ক্লাস্টার ভাগ করে বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময় উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আছে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ। শিক্ষা কর্মকর্তার এই ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত আছেন শিক্ষক প্রতিনিধিরাও।

সাম্প্রতিক পূর্ব আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসা. সাবিকুরন্নাহার মেডিকেল ছুটি রয়েছে কাগজপত্রে। তিনি সেই ছুটি কাটিয়েছেনও। এরপরও প্রতি মাসে নিয়মিত হাজিরা, বেতন উত্তোলন, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়েছেন। এ অনিয়ম সম্ভব হয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে। এ ঘুষ লেনদেনের সময় ধারন করা ভিডিও প্রতিদিনের সংবাদের এ প্রতিনিধির কাছে আছে। এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে বারবার সময় দিয়েও দেখা না করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে বিষয়টি দামাচাপা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৮৯নং আদমপুর বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের সহকারী শিক্ষিকা তামান্না জাহান, ১৪৪নং চরহাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিন্নাত হোসেন, ১০৫নং মীরমদন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বিবি হাজরা

১৪০নং উত্তর চরহাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সাইফুলসহ অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এ শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে মেডিকেল ছুটি নিয়ে নিয়মিত হাজিরা, বেতন উত্তোলন, মাসিক হাজিরা বইয়ে স্বাক্ষর ও জমা দিয়ে থাকেন।

তামান্না বেগম পাঁচ মাসের বেতন উত্তোলন করেন সেই টাকার সিংহভাগ শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষককে দেন। শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিলে সবই সম্ভব বলে দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন শিক্ষক। তারা বলেন, ‘একজন শিক্ষক-শিক্ষিকা মেডিকেল ছুটি নিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, বেতন উত্তোলন, মাসিক হাজিরা থাকেন। এগুলো সবই হয় টাকার বিনিময়ে, শিক্ষা কর্মকর্তা নেন এই টাকা। এ ছাড়া বহু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মৌখিক আদেশের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ছুটি দেন এবং এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে ক্লাস করার অনুমতি দিয়ে থাকেন।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে ৭১নং পূর্ব আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাবিকুন্নাহার বেগমকে তার মুঠোফোনে ফোন দিলে ঘুষ দিয়ে ছুটি নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে ফোন কেটে দিয়ে পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।

শিক্ষকরা প্রাথমিকভাবে ফোন রিসিভ করে পরিচয় পাওয়ার পর আর কথা বলেননি। সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার প্রতিটি বিদ্যালয়ে গেলে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষকদের কাছে তথ্য চাইলে বলেন, আমার কাছে কোন তথ্য নেই শিক্ষা অফিসার এ বিষয়ে জানেন তিনিই বলতে পারবেন। পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বখতিয়ার রহমান জানান, দশমিনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঘুষ বা কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিটলারুজ্জামানের কাছে এভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অফিসে যেতে বলে তিনি অফিসে যাননি এবং তার ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে বিষয়টি দামা চাপা দেওয়ার জন্য প্রতিনিধিকে ফোন দিয়ে থাকেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close