নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০২৪

পেটেন্টের অপেক্ষায় সেই পেঁয়াজ গুঁড়া

গত বছরে দেশে ৩৪ লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ টন। তবে সংরক্ষণ, বাছাই করতে গিয়ে এই উৎপাদিত পেঁয়াজের অন্তত ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়। যার পরিমাণ প্রায় ১১ লাখ টন। এই ঘাটতি পূরণের জন্যই আমদানি করা হয়। আর আমদানিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দাম চড়তে থাকে। দেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা জেলায়, যা মোট উৎপাদনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া পাবনা জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রতি ১০০ মণে কৃষক ৬৫ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন। বাকিটা পচে যায়।’ এই যে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়, তা ঠেকাতে পেঁয়াজের গুঁড়া উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলেছিলেন বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. মাসুদ আলম। দিন গড়াতে অনেক খবরের ভিড়ে তা চাপা পড়ে যায়। জানা গেছে, এখনো পেটেন্টের অপেক্ষায় রয়েছেন পেঁয়াজের গুঁড়ার উদ্ভাবক।

এ ব্যাপারে পাবনার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মাসুদ আলমের উদ্ভাবন সংরক্ষণকালে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়া যেমন রোধ করবে, তেমনি অর্থনীতির নতুন দিক উন্মোচন হবে।

তারিকুল ইসলাম আরো বলেন, ‘পেঁয়াজের পাউডারের উদ্ভাবন যদি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে নষ্ট হয়ে যাওয়া পেঁয়াজ রক্ষা করা যাবে। এতে পাবনা, মেহেরপুরের কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবে। অনেক কৃষি উদ্যোক্তাও বাড়বে।’

মাসুদ আলম বলেন, এই উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে দেশে উদ্যোক্তা গড়ে তোলা সম্ভব। এখন গ্রীষ্মকালীন অনেক উচ্চফলনশীল জাত হয়েছে, সেগুলো গুঁড়া করে বাজারজাত করতে পারবে উদ্যোক্তারা।

তবে দেশে যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ে, তখন আবার খবর পড়ে মাসুদের। কারণ তার উদ্ভাবন দেশীয় উৎপাদনে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের একটি অংশকে রক্ষা করে ব্যবহারের উপযোগী করার সম্ভাবনার দেখিয়েছিল।

খবর নিয়ে জানা গেছে, এখনো পেটেন্টের অপেক্ষায় রয়েছেন পেঁয়াজের গুঁড়ার উদ্ভাবক মাসুদ আলম। ২০২২ সালের শুরুর দিকে পেটেন্টের আবেদন করেন তিনি।

এখন কী অবস্থায় জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, ‘দেড় বছর পর জানতে পারি, আবেদন প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। কিন্তু ভুলটা কী ছিল, তা জানা যায়নি। শুধু আমার সময় নষ্ট হলো।’

‘পরে পেটেন্ট, শিল্প, ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে ওদের নিয়ম ভালোভাবে দেখে আবার আবেদন করি। এখন সেটি সরকারি সাইটে প্রকাশ হবে। কারো কোনো দাবি বা অভিযোগ থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা জানাতে হবে। এরপর আরো কিছু ধাপ পূরণ করে পেটেন্ট পাব।’

সব ধরনের ধাপ পেরিয়ে মাসুদ আলমের গবেষণাটি পেটেন্ট পেলে দেশের অর্থনীতির নতুন দুয়ার খুলতে পারে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগের ব্যক্তিরা।

তার পেটেন্টের আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান।

একাধিক ধাপ পূরণ করে একটি উদ্ভাবনের পেটেন্ট দেওয়া হয় জানালেও মাসুদের আবেদনের বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।

ড. মাসুদ বলেন, ‘আসলে আমরা বেশিরভাগই জানি না পেটেন্টের গুরুত্ব। আমিও বুঝতাম না। আমার উদ্ভাবন নিজের নামে চালিয়ে কেউ কিছু করছে কি না জানার বা বোঝার উপায় নেই। পেটেন্ট হলে আমি জানতে পারব, কারা এটা নিয়ে কাজ করছেন।’

এই গবেষক বর্তমানে বগুড়ার শিবগঞ্জের মসলা গবেষণা কেন্দ্রে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।

বাংলাদেশে রান্নায় মরিচ, হলুদসহ বিভিন্ন মসলার গুঁড়া ব্যবহার করা হলেও পেঁয়াজ কিংবা রসুন কাঁচা কিংবা বেটে ব্যবহারের চল রয়েছে।

মাসুদ আলম জানান, পেঁয়াজের গুঁড়া সূর্যের তাপে ও যান্ত্রিক পদ্ধতি দুভাবেই করা যায়। এই প্রক্রিয়াজাত কাজে প্রয়োজন পেঁয়াজ কাটার যন্ত্র (স্লাইসার), প্লাস্টিকের পাত্র, লবণ, সোডিয়াম মেটা বাইসালফাইড, ড্রায়ার মেশিন (শুকানোর যন্ত্র), পলিব্যাগ।

কয়েকটি ধাপে কাজগুলো শেষ হয়। প্রথমে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে বাছাই করতে হয়। বাছাই করা পেঁয়াজ পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। পরে সেগুলো টুকরা করে কেটে নিয়ে ভাঁপ দিতে হয়। এরপর পেঁয়াজগুলো সোডিয়াম মেটা বাইসালফাইড দ্রবণে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পরে ধাপে ধাপে শুকাতে হয়। শুকিয়ে গেলে সেগুলো ব্লেন্ডিং বা গুঁড়া করলেই কাজ শেষ। এখন এই গুঁড়া মোড়কে ভরে সংরক্ষণ করা যায়।

মাসুদ আলম বলেন, যান্ত্রিকভাবে শুকিয়ে করলে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা। আর প্রাকৃতিকভাবে বাড়তি আর কয়েক দিন সময় লাগবে। দুটো পদ্ধতির খরচ খুব সীমিত।

পেঁয়াজকে গুঁড়া করে ভালোভাবে সংরক্ষণ করলে তা প্রায় দুই বছর ব্যবহার উপযোগী থাকে বলে জানান তিনি।

‘পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণে গুঁড়া করলে এর গুণগত মাণ কমে না। আবার খাদ্যে ব্যবহারের পরিমাণ কোনোটাই কমে না। এক কেজি পেঁয়াজ শুকিয়ে গুঁড়া পাওয়া যাবে ১০০-২০০ গ্রাম। পেঁয়াজ রসালো হলে গুঁড়া পাওয়া যাবে কম।’

মাসুদ আলম বলেন, ‘আমাদের দেশের অধিকাংশ কোম্পানি পণ্য তৈরিতে মসলার গুঁড়া আমদানি করে। কিন্তু দেশের আবহাওয়ায় কেউ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজের গুঁড়া করে না। এ হিসেবে উদ্যোক্তারা দেশে পেঁয়াজের গুঁড়ার বাজার তৈরি করলে প্রচুর আয় করতে পারবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close