চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

মাতামুহুরীতে রাবার ড্যাম ৬০,০০০ একর জমিতে সেচ

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চকরিয়া উপজেলাকে সবুজ বিপ্লবের আওতায় আনতে সর্বপ্রথম মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে অস্থায়ী ভিত্তিতে দুটি ক্রসবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বিপরীতে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর পালাকাটা পয়েন্টে দুটি অস্থায়ী মাটির বাঁধ (ক্রসবাঁধ) তৈরি করে মিঠাপানি আটকিয়ে অবিভক্ত চকরিয়া (পেকুয়াসহ) উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিত করে আসছিলেন। যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল। ২০০৯ সালে মাতামুহুরী সেচ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম দুটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেন।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদ নিশ্চিতে ফুলানো হয়েছে দুটি রাবার ড্যাম। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা শাখার সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর সুফল হিসেবে এ বছর চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মৌসুমের শুরুতে যথাসময়ে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানোর মাধ্যমে মাতামুহুরি নদীর উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানির উৎস ধরে রাখতে সক্ষম হওয়ায় বোরো ধান চাষাবাদে সেচ সুবিধার অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। এতে নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধায় চাষাবাদ নিয়ে খুশি লক্ষাধিক কৃষক।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর মাতামুহুরী নদীতে দুটি অস্থায়ী ক্রসবাঁধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় নদীর দুই পয়েন্টেই স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম স্থাপনের উদ্যোগ নেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এরই আলোকে ২০০৯ সালে মাতামুহুরী সেচ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে স্থায়ী রাবার ড্যাম দুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেন। মূলত ২০০৯ সালের পর থেকে স্থায়ী রাবার ড্যামের মাধ্যমে নদীর মিঠাপানি আটকিয়ে সেচ সুবিধা নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন চাষাবাদ করে আসছেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার কৃষকরা।

পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আরিফুর ইসলাম বলেন, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিতকল্পে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ক্রমে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানো হয়। অনুরূপভাবে এ বছরও চাষাবাদের শুরুতে কোনো ধরনের ক্রটি ছাড়াই নদীর দুই পয়েন্টে স্থাপিত রাবার ড্যাম দুটি ফুলানো সম্ভব হয়েছে। এখন নদীর তীরের কৃষকরা সেচ পাম্পের মাধ্যমে চাষাবাদে সেচ (পানি) সুবিধা নিতে শুরু করেছে।

রাবার ড্যাম ফুলানোর মাধ্যমে নদীর মিঠাপানি আটকানোর বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম নাছিম হোসেন বলেছেন, রাবার ড্যাম ফুলানোর পর কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছি। কৃষকরা নদী থেকে নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা নিয়ে চাষাবাদ করা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে যথাসময়ে নদীর দুটি রাবার ড্যাম ফুলানো সম্ভব হওয়ায় চাষাবাদে সেচ সুবিধা নিয়ে কৃষকদের শঙ্কা কেটে গেছে। এতে সেচ পাম্পের সাহায্যে পানি নিয়ে চকরিয়া উপজেলায় ৪৪ হাজার ৫০০ একর (১৭ হাজার ৮০০ হেক্টর) ও পাশের পেকুয়া উপজেলার ১৫ হাজার একর (৬ হাজর হেক্টর) সহ মোট ৬০ হাজার একর জমিতে এ বছর বোরোধান রোপনে নেমেছেন কৃষকরা।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিতকল্পে স্থানীয় কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাতামুহুরী নদীর দুটি রাবার ড্যাম ফুলানোর জন্য আহ্বান জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ ডিসেম্বর সরেজমিনে গিয়ে নদীর পালাকাটা রামপুরা এবং বাঘগুজারা পয়েন্টের দুটি রাবার ড্যাম ফুলিয়ে দিয়েছি। যথাসময়ে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানোর মাধ্যমে নদীর মিঠাপানি আটকিয়ে চাষাবাদে পানির সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় এখন কৃষকদের অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। এর সুফল ভোগ করবেন লক্ষাধিক কৃষক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close