ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪

ঢাকার ধামরাই

তামা-কাঁসাশিল্পে দুর্দিন

শত বছরের তামা-কাঁসাশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এখন আর নেই সেই ঐতিহ্যবাহী তামা-কাঁসার টুংটুং শব্দ। এক সময়ে ধামরাই পৌরসভায় প্রায় ৪০০ তামা-কাঁসা কারখানা ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা বিলুপ্তির পথে। এখন বড় দুটি কারখানা ছাড়া সবই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তামা-কাঁসার দোকানও।

বড় কারখানার দুইটির মধ্যে ধামরাই পৌরসভার শংকরের বাড়িতে অপরটি ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের কাছের গ্রামে অবস্থিত। কারখানা দুটিতেও রয়েছে কারিগর ও কাঁচামালের সংকট। কাজের অভাবে কারিগররা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।

একসময়ে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, মুসলমানরাও তামা-কাঁসার জিনিসপত্র প্রচুর ব্যবহার করতেন। বর্তমানে তামা-কাঁসার ওই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৫৭৬ থেকে ১৭৫৭ সালের দিকে মোগল সা¤্রাজের সুবে বাংলায় ধামরাই এলাকায় তামা, কাঁসা ও পিতলের ব্যবসা শুরু হয় বলে জানা যায়।

সরেজমিনে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর শুধু ধামরাইয়ের আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রায় ৪০০ তামা-কাঁসার তৈজসপত্র তৈরির কারখানা ছিল। বর্তমানে হাতেগোনা চার-পাঁচটি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় তৈরি জিনিসপত্র বাংলাদেশই নয় দেশের বাইরেও যেত বলে জানা যায়। ইতালি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডা, আমেরিকার থেকে বিভিন্ন সময়ে পর্যটকরা ধামরাইয়ে বেড়াতে এসে এসব জিনিসপত্র স্মৃতি হিসেবে কিনে নিয়ে যেতেন।

এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মধ্যে শোপিস, ম্যাট, ফুলের টব, গ্লাস, থালা, বাটি, কাজলদানি, নোটা, ঘটি, হাঁড়ি, চামচ, বালতি, কাঁসার কড়াইসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার্য জিনিস তৈরি করা হয়। তবে বর্তমানে বিক্রি খুবই কম। রথখোলায় সুকান্ত বণিকের দোকানে গিয়ে জানা গেছে, দেব-দেবীর বড় আকারের একটি মূর্তির মূল্য দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া রাধাকৃষ্ণের মূর্তি ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে একেকটির দাম একেক রকম। ১৫০ থেকে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা দামের জিনিসও পাওয়া যায়।

সুকান্ত বণিক বলেন, ‘তামা-কাঁসার ব্যবসা একদম নেই। কেনাবেচা খুবই কম। সারা দিন বসে থাকি। দু-একজন ক্রেতা আসেন কিন্তু দামের কারণে চলে যান। আগে হিন্দু-মুসলমান সবাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাঁসা-পিতলের কলস, বড় হাঁড়ি, কড়াই উপহার দিতেন। এখন সেই প্রচলন নেই। তবে ব্যবসার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে করোনার সময়। আমার এই দোকানে করোনার আগে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা বেড়াতে এসে পছন্দের জিনিসপত্র কিনতেন। রথমেলার সময় বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও উপহারসামগ্রী হিসেবে দিয়ে থাকেন। এখন ধামরাইয়ে দু-চারটি কারখানা ছাড়া সব বন্ধ হয়ে গেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা দীপক চন্দ্র পাল বলেন, ‘একসময়ে শুধু দেশ নয়, বিদেশেও প্রচুর চাহিদা ছিল ধামরাইয়ের তামা-কাঁসার পণ্যের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ধামরাই পৌরসভায় প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০টির মতো কারখানা ছিল। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় দু-চারটি বাদে সব বন্ধ হয়ে গেছে।’

পৌরসভার ধামরাই বাজারের পূর্ব পাশে শংকর বাড়িতে সবচেয়ে বড় তামা-কাঁসা তৈরির কারখানা ছিল। ওই কারখানায় একসময় ৫৫ থেকে ৬০ জন কারিগর কাজ করতেন। এখন ওই কারখানায় নিতাই দত্ত নামে মাত্র একজন কারিগরকে কাজ করতে দেখা যায়।

নিতাই দত্ত বলেন, ‘শংকর বাড়ির কারখানা ছিল সবচেয়ে বড়। আমরা ৫০ থেকে ৬০ জন লোক কাজ করতাম। এখন মাত্র পাঁচজন কাজ করি। কাজ না থাকায় তারা সপ্তাহে তিন-চার দিন ছুটিতে থাকেন।’

শংকর বাড়ির বড় ছেলে যোগেশ শংকর বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতে এখনো এ পেশায় যুক্ত আছেন। তিনি বলেন, কাজ একেবারেই নেই। আমি একটি কারখানা থেকে কাজ আনি। তারা কাজ না পেলে আমারও কোনো কাজ নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close