জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর)

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

শিল্প-সাহিত্য

মধুকবির প্রেমে ৩২ বছর

মহাকবির প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রায় ৩২ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে মধুসূদন মিউজিয়াম দেখভাল করেছেন শামসুর রহমান (৬১)। মহাকবি মাইকেল মধুসূধন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করেছেন তিনি।

১৯৮৯ সালে সাগরদাঁড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় মধুসূদন মিউজিয়াম। মহাকবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন একাডেমির অধীন এ প্রতিষ্ঠানেরই অংশ মধুসূদন স্মৃতি সংগ্রহশালা। সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একে আলোকিত করে রেখেছেন শামসুর রহমান। রোদণ্ডবৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংগ্রহশালা খোলা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মধুসূদনের স্মৃতি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালায় কবির আলোচিত্র ছাড়াও রয়েছে তার দুই স্ত্রী ও বংশধরদের ছবিসহ তথ্য, লন্ডনের গের্জিনে ভর্তির আবেদনপত্র ও টাকা জমা দেওয়ার রশিদ, ১২০ বছর আগের কবির বাড়ির ছবি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে লেখা কবির চিঠি, তার শিক্ষকদের ছবিসহ তথ্য, কবিকে নিয়ে বিভিন্ন লেখকের বই।

এছাড়া হিন্দু কলেজ ও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের ছবি, যেখানে কবি পড়াশুনা করতেন। সে সঙ্গে আছে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীর রুদ্য শাতিয়ে নামে রাস্তার বাড়ির ছবি, যেখানে মধুসূদন দত্ত ১৯৬৩ সালে থাকতেন। স্মৃতিফলক, পুরুলিয়া গির্জায় মধুসূদনের নামসংক্রান্ত তালিকাসহ অসংখ্য তথ্যে সমৃদ্ধ মধুসূদন মিউজিয়াম। নানা রকম প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তিন দশকের বেশি সময় ধরে এর রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন শামসুর রহমান।

উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, মধুপ্রেমী শামসুর রহমান যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিনাপারিশ্রমিকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, আক্ষরিক অর্থেই তা প্রশংসার দাবি রাখে।

কেশবপুর চারপীঠ আর্ট স্কুলের সভাপতি ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মদন সাহা অপু বলেন, ‘সমাজের জন্য শামসুর রহমানের এ অবদান কোনো মাপকাঠিতে মাপা যাবে না।’ তিনি শামসুর রহমানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানীর ব্যবস্থা করার জন্য জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চারুপীট আর্ট স্কুলের পরিচালক উৎপল দে জানান, গত বছর জেলা পরিষদ থেকে শামসুর রহমানকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে মধু মেলার আয়োজন থেকে স্মারক সম্মান (ক্রেস্ট) দেওয়া হয়।

শামসুর রহমান একজন আলোকিত মানুষ। এবার সমাজকে আলোকিত করার ইচ্ছে থেকে প্রিয় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে করা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছেন। শামসুর রহমান বলেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। আমার মৃত্যুর পর মিউজিয়াম কে দেখবে, সেই ভাবনাতে মন অস্থির থাকে।’ প্রতিষ্ঠানটি মধুপ্রেমীদের মধ্যে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

মধুসূদন মিউজিয়ামের সভাপতি কবি ও গবেষক খসরু পারভেজ বলেন, শামসুর রহমান বিনাবেতনে ৩০ বছর ধরে মিউজিয়ামের কাজ করছেন। ওই স্থানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ণাঙ্গ গবেষণা জাদুঘর তৈরির দাবি জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close