নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪

তীব্র ঠাণ্ডায় বাড়ছে রোগ বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

* ময়মনসিংহে দুই শিশুর মৃত্যু * দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে শত শত রোগী

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উত্তরের জেলা থেকে গেল দক্ষিণের বরিশালে। আগের দিন দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করলেও গতকাল সোমবার বরিশালে অনুভূত হয়েছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রাজধানীতেও আরো তাপমাত্রা কমেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল সকালে কিছুক্ষণ সূর্যের মুখ দেখা গেলেও সন্ধ্যায় নেমে আসে তীব্র শীত। শীতের এই তীব্রতা কমছে না সহসাই। ঠাণ্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে শত শত রোগী। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই শিশু মারা গেছে। এদিকে শীতে কাজে বের হতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ।

গতকাল সকালে রাজধানীর আকাশে সূর্যের আলোর দেখা মিলেছিল। কিন্তু সূর্য পরে মেঘে ঢেকে যায়। বেলা ১১টার পর থেকে আবার সূর্যের আলো দেখা গেছে। দেশের মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি জায়গায় সূর্যের আলো দেখা গেছে। কয়েক দিন পর সূর্যের আলো দেখা গেছে উত্তর-পূর্বের সিলেট অঞ্চলেও। তবে সবখানেই কিছুটা হলেও কুয়াশা আছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সকাল ৯টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বরিশালে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে, ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন এ তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সোমবার রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় রোদের মুখ দেখা গেছে। ঢাকা ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ ও সিলেটের কিছু এলাকায় দেখা মিলেছে সূর্যের আলোর। তবে সবখানেই কিছুটা হলেও কুয়াশা আছে। রাতেও কুয়াশা পড়তে পারে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তিনটি ইউনিটে ৬০ বিছানার বিপরীতে বর্তমানে ভর্তি শিশু সংখ্যা ২৮২। প্রতি শয্যার বিপরীতে প্রায় পাঁচজন রোগী ভর্তি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শিশু ওয়ার্ডে দুই শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস জানান, শীতের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন ইউনিটে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতাল থেকে সব রোগীকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। শীতে কাহিল রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা রাইত শিলশিল করে ঠাণ্ডা বাতাস বহচে, আর কুয়াশাতে কিছু দেখা যায় না। সকালে জাড়ের (ঠাণ্ডার) তানে (জন্য) ভ্যান নিয়া তাড়াতাড়ি বাইর হবা পারু না। কয় দিন থেকে যে জাড় আইচ্চে (আসছে), জাড়োতে হাত-পাওলা ককড়া হয়ে আসেচে।’

যশোরের কেশবপুরে শিশুরা জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শহরের ৮টি বেসরকারি ক্লিনিকে ২৫৩ জন শিশুকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৩৬ এবং বেসরকারি ক্লিনিকে ১১৭ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় ১৫ জন শিশুকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ৯১ জন শিশুকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর জানান, প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শিশু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসছে।

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে শীতের প্রকোপে হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত নবজাতক, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চৌহালী সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ। এদের অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। শুধু বহির্বিভাগে নয় শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। উপজেলা হাসপাতালের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. আনিসুর রহমান মামুন জানান, শীতজনিত রোগ নিয়ে গত ১৫ দিনে ২০৫ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী চার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষগুলো শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে। শীত নিবারণের জন্য খড়কুটা জ্বালিয়ে তাদের উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৪০৫ জন। এদের অধিকাংশই শিশু। বর্তমানে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১২ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ৬৪ জন শিশু।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, তাপমাত্রা আরো কয়েক দিন এমন থাকবে। এ মাসে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, যশোরের কেশবপুর, কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জের চৌহালি প্রতিনিধি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close