মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পটুয়াখালী

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

পটুয়াখালী-১ আসনে ঘর গোছাতে ব্যস্ত আ.লীগ

বড় দলের মাথায় লবণ রেখে বরই খেতে পারে জাতীয় পার্টি * বিএনপি বর্তমানে আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকী) আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যে তোড়জোড় থাকলেও তৎপড়তা নেই বিএনপি ও অন্য দলগুলোর। ভোটের হিসাব-নিকাশ মিলানোর জন্য ঘর গোছাতে ব্যস্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাই এবার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন। আর এ নিয়ে দলীয় কোন্দল রয়েছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগকে ভোগাতে পারে বলে মনে করেন একেবারে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপি বর্তমানে আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। ফলে আপাতত প্রার্থী নিয়ে তাদের কোনো আলোচনা নেই। তবে এই আসনে এবারও বড় দলের মাথায় লবণ রেখে বরই খেতে পারে জাতীয় পার্টি।

পটুয়াখালী জেলা সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকী উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-১ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৭ হাজার এবং নারী ১ লাখ ৯৬ হাজার। এ আসনে আওয়ামী লীগ জিতেছে ৫ বার; ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে। আর বিএনপি জিতেছে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে। জাতীয় পার্টি ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ২০১৪ সালে।

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর এ আসনে আওয়ামী লীগের ৯ জন সম্ভাব্য প্রার্থী এরই মধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না আসার ইঙ্গিত দিলেও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের মধ্যে তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। এদিকে জাতীয় পার্টি উঠে পড়ে লেগেছে এ আসনটিতে নির্বাচন করতে।

এবার এই আসনে নির্বাচন করতে চান আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া। এর আগে তিনি ২৫ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর সম্মেলনে তাকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া বর্তমানে সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করলেও তাকে দেখা যায় না দলীয় কোনো কর্মসূচিতে। এজন্য জেলা আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন তিনি। এদিকে তার মেজ ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান মনি রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ের দ্বিতীয় ধাপে। যেহেতু দীর্ঘদিন এই পরিবারটি আওয়ামী লীগের রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছে তাই এ পরিবারের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে মনোনয়ন।

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান মনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে এলে আমার বাবা শাহজাহান উকিলের বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই। পটুয়াখালী-১ আসনে বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন করার দক্ষতা আমাদের পরিবারের আছে। বাবা মনোনয়ন চাইবেন, তিনি কোনোক্রমে অসুস্থ থাকলে আমি মনোনয়ন চাইব।’

মনোনয়ন দৌড়ে আরো রয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। মাঝে মধ্যেই তিনি এ আসনে গণসংযোগ করছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছেন। অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘ইলেকশনের জন্যই মাঠে কাজ করছি। মনোনয়ন চাইব, মনোনয়ন না পেলে দল যাকে দেবে তার পক্ষে কাজ করব।’

এছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, সাবেক উপজেলা এবং পৌর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ মৃধা। ডা. শফিকুল ইসলাম ২০১৪ সালে মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় পার্টি জোটের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান। ২০১৮ সালেও মনোনয়ন চান। তিনি ছাড়াও তার শ্যালক সাবেক পৌর মেয়র ডা. শফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এছাড়া মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী কানিজ সুলতানা, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান মোহন, দুমকী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আশরাফ প্রমুখ।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর নৌকা প্রতীক নিয়ে গত পৌরসভা নির্বাচন করে জামানত হারিয়েছেন। দলের আরেক নেতা খলিলুর রহমান মোহন জেলা পরিষদ নির্বাচনে হোঁচট খেয়েছেন।

এ ব্যাপারে দুমকী উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘এ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে শাহজাহান মিয়া। তবে তিনি মনোনয়ন না পেলে আফজাল হোসেনের সম্ভাবনা রয়েছে মনোনয়ন পাওয়ার। যদি দলের স্বার্থে জাতীয় পার্টি জোট বাঁধে তাহলে রুহুল আমিন হাওলাদার পেতে পারেন। এছাড়া তৃণমূল কর্মী হিসেবে বলব, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হলে আগে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে হবে, না হলে এই কোন্দল বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গত পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীরা হেরেছেন তাদের ব্যক্তিগত কারণে?। মূলত জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল না, মাঠ পর্যায়েও কোনো ভূমিকা ছিল না। এখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কিছু দেখছি না। তবে সংসদ নির্বাচনে দলের হাইকমান্ড এ আসনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি এবং যাকে দেবে তার পক্ষেই কাজ করব আমরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close