টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি

  ০৪ জুলাই, ২০২২

এরশাদনগরে পারুলি এখন ‘বাবা পারুল’

একাধিক সিন্ডিকেট, আছে সন্ত্রাসী বাহিনী

টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার ‘বড় আপা’ খ্যাত পারুলি বেগম ওরফে পারুল মাদকের রমরমা বাণিজ্য করছেন। এ মাদক কারবারকে নির্বিঘœ করতে তার রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসী বাহিনী।

জানা যায়, ২০১৯ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মাদক কারবার বন্ধের মুচলেকা দিলেও সেই ব্যবসা ছাড়তে পারেননি পারুল। বরং মুচলেকা দেওয়ার কিছুদিন পর আরো বেপরোয়া গতিতে বাড়তে থাকে পারুলের মাদক সম্রাজ্যের কাজ কারবার। এরশাদনগর এলাকায় তিনি এখন ‘বাবা পারুল’ নামে পরিচিত। মাদকের এসব অবৈধ কারবারের আয়-রোজগারে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন এই নারী।

টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকা সরেজমিন ঘুরে এবং এলাকার নানা পেশার বেশ কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে পারুল সিন্ডিকেটের অনেক অজানা তথ্য পাওয়া যায়। তার পরিচালনাধীন মাদক সিন্ডিকেট এখন শুধু এরশাদ নগরে সীমাবদ্ধ নয়। সেই সীমানা এখন পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতেও ছড়িয়েছে। পারুলের পরিচালিত বাহিনীতে মাদক পাচার ও বিক্রিতে কাজ করে নারী, পুরুষ ও বেশ কয়েজন শিশুসহ শতাধিক লোক। গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় এটি সবচেয়ে বড় মাদকস্পট।

জানা যায়, পারুলের আত্মীয়-স্বজনদের বেশির ভাগ লোকই মাদকের ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। তাদের অনেকে নামমাত্র চায়ের দোকান চালায়। মূলত এসব দোকান থেকেই মাদক হাতবদল হয়ে থাকে। দাম্পত্য জীবনে পারুলের একাধিক বিবাহবিচ্ছেদের পর বর্তমানে মানিক মিয়ার সঙ্গে সংসার চলছে। মাদক কারবারে পারুলের স্বামী মানিক, তার মা জুলেখা বেগম ও বড় বোন পারভিনসহ সবাই দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ও গাঁজার ব্যবসা করে আসছে।

পারুলের নেতৃত্বে মাদকের কারবার করছে খলিলের স্ত্রী লিপি, ইবরা মিয়ার মেয়ে রিতা, রাজা ও তার স্ত্রী আলো, ফারুক ও তার স্ত্রী নিপা, পিংকি, পারুলের মামাতো ভাই শাহ্ আলম, সালমা আক্তার (মন্টু), আকাশ, হাসি, সোহান, মুন্না, মুন্নি, খলিল, জীবন, পারভেজ, আবুল, মোশারফ, মিরাজ, দাইত্তা জলিল, রমজান আলী বাবু (৯৯ বাবু)। খালেদা ভা-ারী ও আলামিন, মতি ও বিপ্লব, ইবু মিয়া, জামাই লিটন, পুরি মাসুদের ভাগিনা সাজনসহ আরো প্রায় শতাধিক লোক। এদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় নানা অভিযোগ ও একাধিক মামলা রয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পারুলের মাদক ব্যবসা জীবনের শুরু হয় গাঁজা বিক্রির মাধ্যমে। টানা কয়েক বছর গাঁজা বিক্রি পর হাতে আসে মেথামফিটামিন ও ইয়াবা। গাঁজা ব্যবসার পাশাপাশি অল্প পরিসরে শুরু করে ইয়াবা ব্যবসা। ধীরে ধীরে এই এলাকার ইয়াবা সাপ্লাইয়ার হিসেবে জায়গা দখল করে নেন পারুল। তার মাদক সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যরে বিরুদ্ধে নামসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে থাকার কারণে অনেক বেশি বেপরোয়া জীবনযাপন করেন পারুল। এর আগে এই ‘বড় আপা’ খ্যাত পারুল একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাব ও পুলিশের হাতে।

মাদক ব্যবসার টাকায় পারুল এরশাদনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছে সম্পত্তির পাহাড়। বর্তমানে এরশাদনগরে তার তিনটি বাড়ি রয়েছে। তিনি যে বাড়িতে বসবাস করেন সেটিকে প্রাসাদের মতো সাজিয়ে তুলেছেন পারুল। একই এলাকার বেড়িবাঁধের পাশে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে পলট্রি ফার্ম, খাঁপাড়া এলাকায় রয়েছে আনুমানিক দেড় কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি, এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কামাল দেওয়ানের কাছ থেকে ক্রয় করেছে পাঁচ কাঠা জমি, হোসেন মার্কেট এলাকার ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি শপিং মলের ভবনে আছে দুটি ফ্ল্যাট, যার একটি সম্প্রীতি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ছাড়া গাছা এলাকায় রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট। নামে-বেনামে পারুলর আরো সম্পদ রয়েছে বলে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।

এ দিকে এরশাদনগর থেকে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে গত ২৪ জুন জুমার নামাজের পর মুসল্লি ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ মিছিল করে। এলাকাবাসী জানায়, এসব বাদ প্রতিবাদেরও পরও বেপরোয়া মাদক কারবারে লিপ্ত রয়েছে পারুল গং।

গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাদক সম্রাজ্ঞী পারুলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় পারুল, তার স্বামী মানিকসহ আরো কয়েকজন এক যুবককে বেদম মারধর করছে। সে ভিডিও প্রসঙ্গে অনুসন্ধানে জানা যায়, যুবক পুলিশের সোর্স তার মাদক বিক্রির তথ্য পুলিশকে সরবরাহ করায় এমন মারধরের শিকার হন ওই যুবক।

মাদক কারবারের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে পারুল বলেন, আমি অতীতে মাদক ব্যবসা করতাম, কিন্তু বর্তমানে পুলিশ কমিশনারের কাছে মুচলেকা দিয়ে সেই ব্যবসা বাদ দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আর আমার নামে যে মাদক মামলাগুলো আছে তার বেশ কয়েকটি মামলা থেকে আমি খালাশ পেয়েছি বলে ফোন কেটে দেয়। পরে এই প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অর্থের প্রস্তাব করে বলেন, আপনাকে চা-নাশতা খাওয়ার জন্য কিছু টাকা পাঠাচ্ছি, এই রিপোর্ট কাগজে ছাপানোর দরকার নেই।

পারুলের মাদক ব্যবসার বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে দেখছি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পারুলের মাদক সাম্রাজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এই বিষয় তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। পারুলের নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। অনেকগুলো মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close