সংসদ প্রতিবেদক

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৯

সংসদে এমপিদের তোপের মুখে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী

বিদেশে কর্মরত নারী শ্রমিকদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় না, সম্পূরক প্রশ্নে এমন অভিযোগ তোলেন সংসদের বিরোধীদলীয় এমপিরা। জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও কাজী ফিরোজ রশীদের আক্রমণাত্মক প্রশ্নে তোপের মুখে পড়েন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী মো. ইমরান আহমদ। এমপিরা দাবি করেন, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয় যে নারীদের সম্ভ্রমহানির জন্য তাদের বিদেশে পাঠাতে হবে। তাদের বিদেশে পাঠানো বন্ধের দাবি জানান ওই দুজন এমপি।

জবাবে ইমরান আহমদ বলেন, বিদেশে নারী শ্রমিকরা হয়রানির শিকার হন মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না, এটা সঠিক নয়। সংসদের বিরোধীদলীয় এমপিদের এ ইস্যুতে বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে অভিযোগ করার জন্য অভিযোগ এবং রাজনৈতিক মাঠে দেওয়া বক্তব্যের মতো। মন্ত্রী বলেন, বিদেশে নারীকর্মী পাঠানো রিক্রুট এজেন্সিদের মধ্যে অনিয়মের কারণে ১৬০টির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তিনটি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে কোটি টাকার বেশি। এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। মন্ত্রী আরো বলেন, দেশীয় রিক্রুট এজেন্সিদের কাউন্টার পার্ট রয়েছে সৌদিতে, সেখানকার দায়িত্বরতদের বিস্তারিত জানাতে হচ্ছে মন্ত্রণালয়কে।

গতকাল মঙ্গলবার মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর মৌখিক প্রশ্নের সম্পূরক প্রশ্নে মুজিবুল হক চুন্নু ও কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হয়। পনির উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশে নারীকর্মী পাঠানো হয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৮৪২ জন। এসব নারীকর্মীদের প্রতারণা, নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধে বাংলাদেশ মিশনগুলোর শ্রম উইং কর্তৃক নিয়মিতভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে ইমরান আহমদ বলেন, চার ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের শ্রমিকরা বিশ্বের ১৭৩টি দেশে কাজ করছে। এগুলোর মধ্যে পেশাদারিত্ব শ্রমিক, দক্ষ, আধাদক্ষ ও স্বল্পদক্ষ। মন্ত্রী বলেন, কষ্টের টাকায় পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা দেওয়া আছে বর্তমান বাজেটে। মো. নজরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বে যেসব দেশে কর্মী প্রেরণ করা হয় তার বাইরে আরো ৫৩টি দেশের শ্রমবাজারের ওপর একটি গবেষণা সমীক্ষা করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের যেমন কানাডাসহ অন্যান্য দেশে শ্রমবাজার অনুসন্ধানে সরকার কাজ করছে। কর্মী পাঠানোর চাহিদা পেলে ওইসব দেশেও বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো হবে।

মো. হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, বিদেশে কর্মরত অবস্থায় কোনো কর্মী মারা গেলে সাধারণত নিয়োগকর্তার খরচে লাশ দেশে আনা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আনা সম্ভব না হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে সেসব কর্মীর লাশ দেশে আনা হয়। এমনকি অবৈধ কোনো নাগরিক বিদেশে মারা গেলে তার লাশ ও সরকার দেশে আনার ব্যবস্থা করে থাকে।

মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে যাওয়ার পর কেউ যেন অসাধুদের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে ইউরোপে না যায় সেজন্য এর কুফল ও ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে কর্মীদের সচেতন করা হয়। মোহাম্মদ এবাদুল করিমের প্রশ্নের ইমরান আহমদ বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিদেশে কর্মী পাঠানো ব্যাপক হারে বেড়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিদেশে কর্মী পাঠানো হয়েছে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার দুজন। এর আগে ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিল মাত্র ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬২২ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close