নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ মার্চ, ২০১৯

সামনে রোজা

বাজার নজরদারিতে নামবে একাধিক গোয়েন্দা টিম

চাঁদ দেখাসাপেক্ষে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে রমজান মাস। রোজাকে কেন্দ্র করে বাজারে কয়েকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক মুনাফার নেশায় মেতে ওঠে। কেউ কেউ পণ্য মজুত করেন, চাহিদা বাড়িয়ে সরবরাহ কমিয়ে দেন। এতে বাজার অস্থিতিশীল হয়। ফলে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ে। এ বছর রোজা শুরুর আগেই বাজার মনিটরিংয়ে নামবে দেশের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক গোয়েন্দা টিম। বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখার লক্ষ্যেই এসব টিম কাজ করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাজার মনিটরিং টিমে চারটি গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত থাকছেন। অবৈধ কোনো পণ্য মজুদের সন্ধান পেলে মজুতকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান হচ্ছে জিরো টলারেন্স। অতীতের মতো এ বছরও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গভীরভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করা হবে। জানা গেছে, ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর ছিল বলে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল সরকার। যে কোনো উসিলায় নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থির না হয়, সেদিকে সতর্ক নজর রেখেছিল সরকার। এবারও এর ব্যত্যয় হবে না। কারণ সরকারের এই মেয়াদে প্রথম বছরের প্রথম রোজার মাসে বাজার যাতে অস্থির না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতেই এই আগাম ব্যবস্থা। এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজা আসার আগেই বাড়তে শুরু করেছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে পেঁয়াজ উল্লেখযোগ্য। গত কয়েক দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা। ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা দরে।

মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের সবজির সরবরাহ কমে গেছে। শীতকালীন বিভিন্ন প্রজাতির মাছও খুব কমই দেখা যায়। গ্রীষ্মকালীন সবজি এখনো আসেনি। আর একমাস পরই রোজা এই তিন কারণে সব ধরনের সবজি, মাছ ও ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী বাজারের খুচরা বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি। একই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী এম এ রব খন্দকার বলেন, খামারে দাম বেড়েছে। তাই আমরাও বাড়িয়েছি।

গাজীপুর বোর্ড বাজারের সোহাগ পোলিট্র ফার্মের মালিক স্বপন সরকার বলেন, ‘হ্যাচারিতে একদিনের বাচ্চাসহ মুরগির ওষুধ, খাদ্যের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। দাম না বাড়িয়ে উপায় কী? আমাদের তো বাঁচতে হবে।

কাওরানবাজারে কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম লাল মিয়া জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। এখনো পণ্যের সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। তবে অবৈধ মজুত যাতে কেউ করতে না পারেন সেদিকে নজর রাখতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চাহিদার তুলনায় সব ধরনের পণ্যের মজুত সন্তোষজনক আছে। কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শুধু রমজানে নয়, সারা বছরই দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে, দাম বাড়বে না। এর জন্য যা প্রয়োজন, তা-ই করা হবে। কেউ যাতে বাজার অস্থির করতে না পারেন, সে বিষয়ে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, রোজা উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মজুত, চাহিদা, সরবরাহ, মান ও দাম মনিটরিংয়ে বাজারে নামবে চারটি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে একাধিক টিম। ভাউচারের সঙ্গে কোনো ধরনের অসঙ্গতি দেখলে বা প্রতীয়মান হলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেবেন তারা। এজন্য ব্যবসায়ীদের কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, রমজান মাস উপলক্ষে চূড়ান্ত করণীয় নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসককে নিজ নিজ জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। তারা বাজার মনিটরিং ছাড়াও ব্যবসায়ীদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেবেন। কেউ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশনা দেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, ২০০৭ সাল থেকে ঢাকা শহরের বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং টিম রয়েছে। একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি এবং পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে এই টিম গঠিত।

তিনি বলেন, তারা নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকেন।

সূত্র জানায়, প্রতি বছরই রোজার আগে একটি মহল বেশি মুনাফার আশায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। তাই আসন্ন রমজানে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে সরকার গঠিত মনিটরিং কমিটিগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এ ধরনের কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ও ডিএমপির একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। সহকারী ফোর্স হিসেবে যুক্ত থাকবেন পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের সদস্যরা।

আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করে প্রশাসনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া এবং নিত্যপণ্যের দর তদারকিতে টিসিবিকে (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) আরো সক্রিয় করতে পারলে আসন্ন রোজার মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবেÑ এমনটাই মনে করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এদিকে রোজাকে সামনে টিসিবি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে এরই মধ্যে চিনি, তেল, ছোলা, মসুর ডাল বিক্রি শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রতি বছরই বাজার পরিস্থিতি জানতে ও তদারকিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই এসব টিম বাজারে নামবে। কোথাও সমস্যা দেখলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেভাবে ব্যবস্থা নেবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close