গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ফাইভ-জি এ বছরই

চলতি বছরেই চালু হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক (ফাইভ-জি)। এমনই আশার কথা জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এ উপলক্ষে শিগগিরই তরঙ্গ (স্পেকট্রাম) হস্তান্তর করা হচ্ছে সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটককে। এটি পাওয়ার পর যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে অপারেটরটি। তাদের প্রস্তুতির পরই চালু হবে পঞ্চম প্রজন্মের এই নেটওয়ার্ক।

সূত্র মতে, এরই মধ্যে সরকার ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে ফাইভ-জির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম প্রথমে পরিচালনা করবে তরঙ্গের স্বত্বাধিকারী টেলিটক। প্রথমে রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক বাসিন্দারা এর সুবিধা পাবেন। পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়বে দেশজুড়ে এর নেটওয়ার্ক। তবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হলে গ্রামীণ, বাংলালিংক, রবি-আজিয়াটাসহ অন্যান্য অপারেটর তারাও এর সুবিধা নিতে পারবেন। তাদের জন্য তরঙ্গ উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। খবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (বিটিআরসি)।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে সর্বাধুনিক ফোর-জিএলটিই প্রযুক্তিকে ছাপিয়ে যেতে হবে ফাইভ-জিকে। তারা বলছেন, ফাইভ-জির অর্থ যাই দাঁড়াক না কেন সহসাই ফাইভ-জি প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্পন্ন করে ফেলতে হবে। কারণ ২০২৫ সালে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর মাত্র ৬ শতাংশ পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ-জি) ইন্টারনেট সেবা নেওয়ার সুযোগ পাবে। খবরটি বৈশ্বিক মোবাইল কমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রি জিএসএম অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ)। সে বছর বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মোট গ্রাহকদের যথাক্রমে ৭ ও ৬ শতাংশ ফাইভ-জির সেবা পাবেন। চলতি বছরের মধ্যেই ফাইভ-জি চালুর পরিকল্পনা এরই মধ্যে ঘোষণা রয়েছে বিটিআরসির। চালুর পর ঢাকা কেন্দ্রিক এই সেবা দেশের সব জেলায় আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে। জিএসএমএ অবশ্য বলছে, বাংলাদেশে এখনো ফোর-জি নেটওয়ার্ক ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি। গ্রামীণের মতো গ্রাহক সংখ্যাই শীর্ষে থাকা এই অপারেটরও ঠিকমতো ফোর-জি সেবা দিতে পারছে না বলেও নানা অভিযান রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। খোদ রাজধানীতেই ইন্টারনেটের নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাচ্ছে না গ্রামীণের গ্রাহকরা। কথা বলা শুরু হলেই কাটিং কাটিং সিগন্যাল দিতে থাকে; কিন্তু কথা না বলেই দেখা যায় নেটওয়ার্ক খরচা হয়ে গেছে। এ নিয়েও খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই গ্রামীণের। অন্য অপারেটরের চিত্রও বলা যায় একই। তবে পঞ্চম প্রজন্মের এই সেবা চালু হলে গ্রাহকের এই দুঃখ ঘুচবে কি না তা নিয়েও রয়েছে নানা সংশয়। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, চলতি বছরেই টেলিটককে দিয়েই উদ্বোধন হবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক, সেটা অনেকটা নিশ্চিত বলা যায়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তারাও তেমনটাই জানিয়েছেন। তারা বলছেন, তরঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা আগের জায়গা থেকে নমনীয় হতে যাচ্ছে সরকার। শুধু নির্দিষ্ট টেলিটকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাচ্ছে না। শুরু টেলিটক দিয়ে হলেও অপারেটরের দরজা থাকছে উন্মুক্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাইভ-জি ব্যবহার করে জীবনের সবক্ষেত্রে, কৃষি ও শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে একটি নতুন যুগ তৈরি করবে। সেটি হবে কৃষি, শিল্প ও তথ্য যুগের পরের যুগ। কৃষি যুগের বাংলাদেশকে তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করার পরও ডিজিটাল যুগে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেছেন, ফাইভ-জি শুধু উচ্চগতির ডিজিটাল সংযোগই নয়, এটি ডিজিটাল যুগের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাকবোন। ২০২১ সালের মধ্যে ফাইভ-জি যুগে প্রবেশে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। টেলিটককে দিয়ে প্রথমে এটির উদ্বোধন করা হবে। তবে অন্য অপারেটরদের দরজা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তারা চাইলে এই সেবা গ্রহণ ও বিতরণ করতে পারবেন। কিন্তু তাদের আমরা বলতে পারব না; এটা তোমাদের গ্রহণ করতেই হবে। এটা টেলিটককে বলতে পারি। মন্ত্রী আরো বলেন, টেলিটক যখন এই সেবা চালু করবে; ওই দিন থেকে অন্য অপারেটররা সেবা দিতে চাইলে সেটাও পারবেন। কারো জন্য দরজা বন্ধ রাখা হয়নি। তরঙ্গ সবাইর জন্য থাকবে, যোগ করেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এই মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গত ১২ বছরে বাংলাদেশ ডিজিটাল সংযোগ প্রতিষ্ঠায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছে। করোনার সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা দেশের জনগণ উপলব্ধি করেছে। এ কর্মসূচির কারণে বৈশ্বিক অতিমারিতেও মানুষের জীবন যাত্রা থেমে থাকেনি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মানুষের ইন্টারনেট ব্যান্ডউথের দ্বিগুণ চাহিদা বেড়েছে। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। শতকরা ৯৮ শতাংশ মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ফাইভ-জি চালু হলে দেশে নেটওয়ার্ক চালু হলে তথ্য ও প্রযুক্তিতে নতুন এক সম্ভাবনা ও দিগন্তের সূচনা হবে।

বিটিআরসির তরঙ্গ বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য টেলিটককে শিগরিই তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হবে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইকুপমেন্ট আনতে ও নেটওয়ার্কিং কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটাতে যতটুকু সময় লাগে সেই পর্যন্তই অপেক্ষা। ঢাকা শহরকেন্দ্রিক সীমিত পরিসরে সেবা কার্যক্রম শুরুর জন্য দেওয়া হচ্ছে। এমনকি টেলিটক চাইলে তাদের সুবিধামতো স্থানে এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু করতে পারেন। পরে অন্যান্য অপারেটরগুলো এই সুবিধা লাভ করবেন। উল্লেখ্য, দেশে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালুর জন্য প্রথম উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৮ সালে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফাইভ-জি,প্রযুক্তি,বিটিআরসি,নেটওয়ার্ক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close