গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

গঠন করা হচ্ছে এনইআইআর কর্তৃপক্ষ

রাষ্ট্রের চারটি স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (বিটিআরসি) তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হচ্ছে জাতীয় যন্ত্রপাতি শনাক্ত নিবন্ধন (এনইআইআর) কর্তৃপক্ষ। এই এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) কর্তৃপক্ষ মোবাইল হ্যান্ডসেটের চুরি রোধ করা, অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেটের অনুপ্রবেশ ঠেকানো, এই সেক্টরের আমদানি-রফতানি পণ্যের রাজস্ব চুরি বন্ধ ও আয় বাড়ানো এবং জাতীয় নিরাপত্তা সমুন্নত রাখাতে আইনানুগভাবে ভূমিকা রাখবে। এই কর্তৃপক্ষ তৈরির জন্য সরকারের ব্যয় হবে ৫০ কোটি টাকা যা আর্থিক অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং টেলিযোগাযোগ সেক্টরের ক্রয়-বিক্রয়ে স্বচ্ছতা ফেরাতে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত বিধিমালা পিপিআর-২০০৮ অনুসরণ সাপেক্ষে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি। কারণ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফর্মাকে (ডিপিপি) অনুসরণ করে এই কর্তৃপক্ষ তৈরিতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। অধিক বিলম্বে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের জন্য হুমকি না হয় সেজন্য ওই পথ অনুসরণ করছে সরকার। এক্ষেত্রে ডিপিপি নয়, পিপিআরকে অগ্রাধিকার দিতে যাচ্ছে বিটিআরসি। এ বিষয়টির বৈধতা নিশ্চিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী ও কমিশনের অভিজ্ঞদের মতামত নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

বিটিআরসির সূত্র মতে, এনইআইআর (নির) কর্তৃপক্ষ তৈরির চিন্তা আসে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগসহ সেবার প্রভাব ও প্রসারের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি ইস্যুতে। এগুলোর পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোবাইল হ্যান্ডসেট ও বেতার যন্ত্রপাতি আমদানির হার। বছরভেদে এর ক্ষেত্র দ্বিগুণ হচ্ছে। বলা যায়, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এসব যন্ত্রাংশ কেনার হার ২০১৮ সালে যা ছিল পরবর্তী বছরে তা দ্বিগুণ হয়েছে বলে পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।

কিন্তু স্বতন্ত্র তদারকি কমিটি কিংবা টিম না থাকার কারণে সঠিক প্রক্রিয়ায় মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও বেতার যন্ত্রের আমদানির সংখ্যা তত্ত্ব নির্ণয় হচ্ছে না। এসব যন্ত্রের আড়ালে কি আমদানি হচ্ছে তা রাষ্ট্রের জন্য কতটুকু স্বার্থসংশ্লিষ্ট তা-ও মনিটরিং ছিল না। তাই জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা অপরিহার্য বিবেচনায় তৈরি হচ্ছে এনইআইআর। এ বিষয়ে গত বছরে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠানটির সভাকক্ষে একটি সভা হয়। এতে এনইআইআর স্থাপনের বিষয়ে চারটি সিদ্ধান্ত হয় সেগুলো হচ্ছে, দেশের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির ডাটাবেজ বিটিআরসির নিয়ন্ত্রণে রাখা, সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অথবা প্রকল্প আকারে তৈরি করা, সমন্বয় করে তাদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সেখানে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং এটা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০০৮ এর অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত মহাপরিচালককে সম্পৃক্ত করা।

এছাড়া এরই মধ্যে কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে টেন্ডার ড্রাফটিং কমিটি দরপত্র প্রস্তুত করেছে এবং অফিসিয়াল কস্ট ইস্টিমেট কমিটি দাফতরিক প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। সেখানের ব্যয়ে হিসাব ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বিটিআরসি কার্যালয়ে স্থাপিতব্য ডাটা সেন্টার প্রস্তুত ও ডাটা সেন্টারে বিবিধ হার্ডওয়্যার বাবদ সাড়ে ৫ কোটি টাকা, ডিসাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইটে ডাটা সেন্টারে বিবিধ হার্ডওয়্যার বাবদ ৪ কোটি ৬০ লাখ, নির সফটওয়্যার এবং লাইসেন্স বাবদ সাড়ে ২৩ কোটি টাকা, নেটওয়ার্ক সংযোগ এবং ব্রান্ডউইডথ ২ কোটি ৩৫ লাখ এবং তিন বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৪ কোটি।

সমুদয় অর্থ ব্যয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির জন্য গত ২৬ জানুয়ারি বিটিআরসি একটি পত্র পাঠায়। এছাড়া কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে বিটিআরসির এস এম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সালকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ইঅ্যান্ডও) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, এসএম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক কাজী মো. আহসানুল হাবীব মিথুন, আর্মস ফোর্সেস ডিভিশনের আইসিটি শাখার একজন ও ডট-বিটিসিএল ও বিএসসিসিএলের একজন সদস্য এবং এসএম শাখা সিনিয়র সহকারী পরিচালক সনজীব কুমার সিংহ। এ কমিটির কার্যপরিধি টেন্ডার ওপেন কমিটির গৃহীত দরপত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন করা, সুপারিশসহ দরপত্র মূল্যায়ন ও প্রতিবেদন তৈরি এবং অনুমোদনের পর অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা। এনইআইআর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা হলে রাষ্ট্রের চারটি স্বার্থ সমুন্নত হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিটিআরসি,এনইআইআর,তথ্যপ্রযুক্তি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close