বদরুল আলম মজুমদার

  ২৯ মে, ২০২০

দলীয় নেতাদের সাক্ষাৎ দিচ্ছেন খালেদা জিয়া

মুক্তির দীর্ঘ এক মাস পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির নেতারা ঈদের দিন দেখা করে এসেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এছাড়া নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও ওইদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করেছেন।

সর্বশেষ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। এর আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস দেখা করেছেন। তবে তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার পুনরায় সাক্ষাৎ হওয়া নিয়ে যথেষ্ঠ আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দেখা করতে পেরেছেন শিমুল।

এদিকে দলীয় নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ দিতে থাকায় অনেকেই এখন লবিং তদবির করছেন সাক্ষাৎ পেতে। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গড়পড়তা সাক্ষাৎ দিতে চান না বিএনপি প্রধান, তবে বেছে বেছে আরো কিছু দলীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ দিতে পারেন। সেই তালিকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দু-একজন নেতাও আছেন। দুর্নীতির মামলায় দীর্ঘ দুই বছর কারাগারারে থাকার পর গত মাসের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্ত দেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। এরই মাঝে দেশব্যাপী বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব চলায় বিএনপি প্রধানকে ২২ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হয়। মুক্তি পাওয়ার পর আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তার পরবর্তী চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দলীয় নেতাদের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কিছু খবর এলেও এসব বিষয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা কিছুই বলেননি। তবে চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে বিএনপি নেতারা বলছেন স্বাস্থ্যের তেমন কোনো উন্নতি কার্যত হয়নি। তবে বাসায় থাকায় মানসিকভাবে একটু শক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া।

ঈদের দিন রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সাক্ষাতের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মাধ্যমে খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুলের মাধ্যমে খালেদা জিয়া সবাইকে বাড়িতে থেকে এই সংক্রমণকে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।

ফখরুল বলেন, সেই সঙ্গে তিনি সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন যে, এত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, এখন সাহস না হারিয়ে দাঁড়াতে হবে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দলীয় প্রধানের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সাক্ষাৎ শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, এই চরম সংকটের সময়ে যখন সামাজিক দূরত্বকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যেও খালেদা জিয়া আমাদের সময় দিয়েছিলেন। আমরা পুরোপুরি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আমাদের নেত্রীকে নিরাপদ রাখার জন্য আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমরা সবাই স্পেশাল পিপিই পরে হাতে গ্লাভস নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছি।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারীরিক অবস্থা আমি আগেও বলেছি উনার কোনো ইম্প্রুভমেন্ট হয়নি। ইম্প্রুভমেন্ট মধ্যে যেটুকু হয়েছে উনি আগে থেকে মানসিক অবস্থাটা তার অনেক ভালো হয়েছে, শারীরিক অবস্থার তার খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। এর আগে গত ১১ মে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছেন দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। গত বুধবার রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে মিন্টু গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় ঢোকেন তিনি এবং বের হন ৯টা ২৫ মিনিটে। সাক্ষাতের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ম্যাডামকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম, ঈদ মোবারক জানিয়েছি। উনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। দীর্ঘ আড়াই বছর পর দলীয় প্রধানের সঙ্গে তার দেখা হলো বলে জানান তিনি। বিএনপির ২৮ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে প্রথম আবদুল আউয়াল মিন্টু দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন।

এরই মধ্যে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতাই সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন বলে জানা গেছে। শতাধিক দলীয় ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা সাক্ষাৎ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে দলের সাত যুগ্ম মহাসচিব, কিছু আইনজীবী নেতা ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অন্যতম। এর বাইরে অঙ্গ দলগুলোর নেতারাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে অল্প সময়ে মধ্যে দেখা দিতে পারেন।

এর আগে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। দলীয় সূত্র মতে, গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টায় গুলশানে খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা ফিরোজায় যান মাহমুদুর রহমান মান্না। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেন তিনি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ করে রাত পৌনে ৯টায় বেরিয়ে যান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা।

সাক্ষাৎ শেষে মান্না বলেন, ‘আমার বাসা খালেদা জিয়ার বাসার পাশেই। তাই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সেই সুযোগ তিনি দিয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা হয়েছে।’ খালেদা জিয়া কেমন আছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আছেন কোনো মতো। এখন তিনি বসতে পারছেন। কথা বলতে পারছেন। আমাদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন এটাই তো অনেক!’

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খালেদা জিয়া,সাক্ষাৎ,বিএনপি চেয়ারপারসন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close