নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ আগস্ট, ২০১৯

জিয়ার হাতে দেশে গুম-খুনের কালচার শুরু : প্রধানমন্ত্রী

জিয়াউর রহমান এই দেশে গুম-খুনের কালচার শুরু করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (উত্তর ও দক্ষিণ) এই সভার আয়োজন করে।

সারা দেশে গুম-খুন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় সব নেতাদেরই কিন্তু গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তারা কারাগারেই ছিল। ৩রা নভেম্বর ওই কারাগারে হত্যাকাণ্ড ঘটে। ৭৫ সাল থেকে ৮৯ সাল পর্যন্ত আমাদের সকল নেতাকর্মীরা কারাগারে বন্দি। বিভিন্ন জায়গায়, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হয়েছে। বহু নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে, অত্যাচার করেছে, তার পরিবার লাশটাও পায়নি। আজকে তারা গুম-খুনের কথা বলে, এই দেশে গুম-খুনের কালচারটা শুরু করেছিল জিয়াউর রহমান।

জিয়ার বিএনপি আমলে নিজ দলের নেতাকর্মীদের হত্যার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজ বাবু তাকে যে তুলে নিয়ে গেল, তার পরিবার তো আর তার লাশ চায়নি। চট্টগ্রামের মৌলভী সৈয়দ তাতে ধরে নিয়ে টর্চার করে মেরে ফেলে দিল, তার ঠিকানাও কেউ পায়নি। বগুড়ার যুবলীগ নেতা পটল, তাকেও এইভাবে খুন করলো। এইভাবে একে একে যদি খোঁজ করে দেখা যায়, আমাদের অগনিত নেতাকর্মীদেরকে তারা এইভাবে তুলে নিয়ে গেছে, নিয়ে যাওয়ার পর অত্যাচার করেছে, পঙ্গু করে দিয়েছে, অসুস্থ্য করে দিয়েছে, লাশ গুম করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরাচারী শাসকরা যখন ক্ষমতা নেয় তখন তাদের মধ্যে এক সুপ্ত বাসনা থাকে, রাজনৈতিক নেতা হওয়ার। যদিও তারা রাজনৈতিক নেতাদেরই গালি দেয়। মোশতাক বেঈমানি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল, আড়াই মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। ঠিক যেভাবে মীর জাফর বেঈমানি করে সিরাজ উদ-দৌলাকে পরাজিত করেছিল, মীর জফরও কিন্তু ২ মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারে নি। মীর জাফর নামটাই বেঈমান হিসেবে পরিচিত।

ঠিক মোশতাকের ভাগ্যেও তাই ঘটলো, সেও থাকতে পারলো না। কিন্তু এই মোশতাকই কিন্তু জিয়াউর রহমানকে সেনা প্রধান করেছিল। নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে তার সব থেকে বিশ্বস্ত মানুষ যে, মোশতাকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, রশিদ ফারুকের সাথে যে চক্রান্ত করেছিল এবং এই হত্যাকান্ড করতে উৎসাহিত করেছিল সেই জিয়াউর রহমানকেই মোস্তাক সেনা প্রধান করে। আর পরবর্তীতে সেই সেনা প্রধানই এক দিকে সেনা প্রধান অন্য দিকে রাষ্ট্রপতি থেকে নিজেকে ঘোষণা দেয়, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।

আমরা মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি, ইদানিং বিএনপি নেতারা জিয়ার সাফাই গাইতে একটা কথা বলা শুরু করে দিয়েছে যে, ৭৫’এ তো বিএনপি প্রতিষ্ঠাই হয় নি, তারা আবার খুন করলো কিভাবে? কিন্তু বিএনপির যে প্রতিষ্ঠাতা সে নিজেই যখন খুনি, আর শুধু খুনি না, খুনের সঙ্গে তো জড়িত ছিলই, আবার এই খুনিতের বিচার হবে না, তার জন্য যেমন অডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল, এই খুনিদেরকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতা হয়েও যারা কোনো না কোনোভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, তারা কিন্তু ঠিকই পরবর্তীতে মোশতাকের পরে জিয়ার সাথেই গেছে, এখনও অনেকে বেশ বড় বড় কথাও বলে, কিন্তু তারা সে এ চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত তাতে কোন সন্দেহ ছিল না এবং আজকে না প্রমাণিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার তদন্ত করতে বাংলাদেশে আসতে চাওয়া ‘স্যার টমাস ইউলিয়ামসকে’ জিয়াউর রহমান এ দেশে আসতে ভিসা দেন নি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, জিয়া যদি খুনি না হবে, তার হাতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি যদি খুনিদের দল না হবে, তাহলে কেন সে সময় জিয়া ‘স্যার টমাস ইউলিয়ামসকে’ কেন বাংলাদেশে তদন্ত করতে আসতে দেয়নি। তার দূর্বলতাটা কী ছিল। তিনি কিন্তু ভিসা দেন নি।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, শুধু যে রাজনৈতিক দলের উপর এই জুলুম অত্যাচার তা নয়, সেনাবাহিনীতে যারা মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ছিল, যারা একদিন জাতির পিতার ডাকে সারা দিয়ে যুদ্ধ করেছিল, তাদেরকে নির্মমভাবে একের পর এক হত্যা করেছে। ৭৫’এর পর একের পর এক ১৯টা ক্রু হয়েছে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী শত শত অফিসার, সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সৈনিক, অনেকে জানেই না তাদের কি অপরাধ। তাদের অপরাধ নিয়ে তারা জানতো না, তেমনি নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করারও কোন সুযোগ ছিল না । দিনের পর দিন ফাঁসি দিয়ে যেমন মেরেছে, গুলি করেও মেরেছে।

শোনা যায়, জিয়াউর রহমান টেবিলে বসেই কাঁটা চামচ দিয়ে খেত আর এ ধরনের মৃত্যুদণ্ডের ফাইলে স্বাক্ষর করতো। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যারা ছিল, তারা বলতে পারবে, এমন এমন রাত, ৮ জন-১০ জন করে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি দিয়েছে। এবং তাদের চিৎকার কান্নায় বাংলার আকাশ ভারী হয়েছে। তাদের পরিবার জানতেও পারেনি। তার চরিত্রটাই এ ধরনের খুনের।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্ল্যাহ। বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সাদেক খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বজলুর রহমান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রধানমন্ত্রী,শেখ হাসিনা,জাতীয় শোক দিবস,গুম-খুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close