গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ডিসিরাই থাকছেন রিটার্নিং অফিসার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার (রিটার্নিং অফিসার) ক্ষমতা থাকছে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) হাতে। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ হবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিসিদের বাইরে অন্য কাউকে এ পদে (ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা) এনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় না। ফলে রিটার্নিং কর্মকর্তা হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন ও দাবি করে আসা কমিশনের যোগ্য কর্মকর্তারা এবারো থাকছে উপেক্ষিত। কমিশন বলছে, জেলার প্রশাসনিক ইউনিট ধরা হলে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ডিসিরা। তাদের বাইরে জাতীয় নির্বাচনে অন্য কাউকে এখানে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে দেওয়া হলে নির্বাচনের কার্যক্রমে সমন্বয় করা কমিশনের একার পক্ষে অসম্ভব। পাশাপাশি, নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা সবাই থাকে ডিসিদের অধীনে; সেখানে অন্যদের এ কাজে যুক্ত করা হলে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে নির্বাচন। তাই নানাদিক বিবেচনা করে আগের ধারাবাহিকতার দিকে থাকছে কমিশন।

এদিকে আগামী ৪ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তফসিল ও ভোটের তারিখ ঘোষণার জন্য বসছে কমিশন। এ সভায় সব আলোচনা শেষ করে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো নুরুল হুদা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করবেন—এমনটাই সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ দিনই কারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন তাও চূড়ান্ত হবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আগামী নির্বাচনে কাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আগামী ৪ নভেম্বর কমিশন সভা হবে। যদি সে দিন তফসিল ঘোষণা করা হয় তখন বলা যাবে কারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হচ্ছেন। এর জন্য তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

কমিশন সচিব বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোয় যেহেতু ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়েছিল, সঙ্গত কারণেই তাদের বাইরে এ কাজে অন্যদের যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কমিশনের কর্মকর্তাদের আমরা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা করি; সেখানে কমিশনের পুরো মনোযোগ থাকে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন তো ব্যাপক পরিসরে হয়। এখানে কমিশনের একার পক্ষে পুরো সংসদীয় ৩০০ আসনকে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। তবে ডিসিরা একটি জেলার প্রধান, পুরো ইউনিটের দায়িত্বও পালন করেন। তাদের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে। সেই দিক থেকে পুরো জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ডিসিরা পুরো নির্বাচনের কার্যক্রম লুক অফটার (দেখা শোনা) করতে পারবে। তিনি আরো বলেন, বড় জেলাগুলোয় দুইজন রিটার্নিং কর্মকর্তা করার কোনো চিন্তা নেই। তবে মেট্রোপলিটান এলাকায় বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভাগীয় কমিশনারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হয়। এ হিসাবে ৬৪ জন ডিসি ও দুই বিভাগীয় কমিশনার নিয়ে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হবে বলে জানান প্রশাসন সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

নির্বাচন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের মূল ভূমিকায় কমিশন থাকলেও প্রায় পুরো আয়োজনই থাকে প্রশাসনের হাতে। এক্ষেত্রে চালকের আসনে থাকেন ডিসিরা।

এদিকে, সংসদ নির্বাচনের পরিধি দেশজুড়ে। সেদিক থেকে স্থানীয় নির্বাচনের গন্ডি ছোট পরিসরের। ৩০০ সংসদীয় আসনে নির্বাচনকালে সিইসিসহ পাঁচজন কমিশনারের পক্ষে সঠিক তদারকি করা কঠিন। এ কারণে ডিসিদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয় ইসিকে। তাই সরকারের মতো কমিশনও চায় না ডিসিদের বাইরে অন্য কাউকে রিটার্নিং অফিসার করা হোক। ফলে ইসির যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরও রিটার্নিং অফিসার হওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের মতো এবারো তারা থাকছে উপেক্ষিত।

এদিকে, এবার বড় জেলাগুলোয় দুইজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ এবং ডিসিদের পাশাপাশি নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখার বিধান রেখে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তবে এখনো সেটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়নি। ফলে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এখনো আইনি ভিত্তি না পাওয়ার কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগে জোরালো দাবি উত্থাপনের পথও বন্ধ থাকছে এবার। উল্লেখ্য, ৩০ অক্টোবর থেকে পরের বছরের ২৮ জানুয়ারি সময়ে সংসদ নির্বাচন হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ডিসি,জাতীয় সংসদ নির্বাচন,রিটার্নিং অফিসার,নির্বাচন কমিশন,ইসি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close