সম্পাদকীয়

  ০৯ জুন, ২০২১

সঠিক সময়ে ঘুম ভাঙলে দুর্যোগ ঠেকানো যায়

ওদের ঘুম ভাঙতে দেরি হয়। আরামের শরীর বলে কথা। অনেক বড় চেয়ারে বসেন। তাই বলার কেউ থাকে না। ওদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই নির্ভর করতে হয় সাধারণ মানুষকে। আর তাদের এই হেয়ালি মনোভাবের কারণে ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকে। তাতেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙে না। কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতেই ওরা ভালোবাসেন। এই আচ্ছন্ন থাকার মাঝে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়লেও ওদের জীবনে কোনো দুর্ভোগ নেই। ওরা ভালো থাকেন, সুখেই থাকেন। এটাই এ যাবৎকালের ইতিহাস।

চট্টগ্রামে এখন অল্প সময়ের ভারী বৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে যায়। যুগ যুগ ধরে এ সমস্যার মুখোমুখি চট্টগ্রামবাসী। গত রোববারের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। মাত্র কয়েক দিন আগেও স্বল্প সময়ের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ নিচু এলাকা হাঁটু ও কোমরপানিতে তলিয়ে যায়। পুরো বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এই জলাবদ্ধতা কাটাতে নড়েচড়ে বসতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত দেরিতে কেন ঘুম ভাঙল। একটু আগে নড়েচড়ে বসলে কাজের গতিটা ত্বরান্বিত হতে পারত। সরকার তো মানুষের দুঃখ সরাতে কখনো কার্পণ্য করেনি। জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আপনারা প্রকল্পের কাজও শুরু করেছেন। তবে আপনাদের কাজের লয় আবর্জনায় আটকে পড়া খরস্রোতা নদীর মতো। আপনারা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের কাজে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য তৎপর হয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। প্রশ্ন হলো এত দেরিতে তৎপরতার কথা কেন এলো!

বৃহৎ এই মেগা প্রকল্পকে সবাই চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা লাঘবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রীও চট্টগ্রামবাসীর কল্যাণের কথা মনে রেখেই এ বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা মনে করি, তার এ আন্তরিকতার মর্যাদা যেন কোনো কারণেই বাধাগ্রস্ত না হয়। যে যার অবস্থানে আছেন, তিনি তার অবস্থানে থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে আন্তরিক হবেন। তাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

সিডিএর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশনের বিষয়ে দেশবাসীর ধারণা ইতিবাচক। এ যাবৎ তারা যতগুলো কাজে হাত দিয়েছেন, তা তারা ঠিক সময়ের মধ্যে শেষ করেছেন এবং মানগত দিকে কোনো প্রকার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘নগরীতে যাতে পানি জমে না থাকে; সেদিকে আমাদের খেয়াল আছে এবং আমাদের রেসপন্স টিম বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে। আপাতত কিছু সমস্যা হলেও আবহাওয়ার উন্নতি হলেই আমরা বাকি কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে পারব। মোদ্দাকথা আমরা নগরীতে পানি জমতে দেব না। আমাদের টিম ফিল্ডে আছে এবং আমরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছি।’

প্রকল্পের পুরো দায়িত্ব সেনা ইউনিটের নয়। তারা এক-পঞ্চমাংশের দায়িত্ব পেয়েছে। বাকিটা সিডিএ ও সিটি করপোরেশনের। যেখানে সব সময় সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরা আশা করব, তাদের কোনো অবহেলার কারণে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের সবাই আন্তরিক হবেন এটুকুই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তমত,সম্পাদকীয়,প্রকল্প,দুর্যোগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close