সম্পাদকীয়

  ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু

বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হোক

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দুই চালক ও এক সহকারীকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই ঘটনায় বাসমালিক ও এক সহকারী খালাস পেয়েছেন। একই সঙ্গে আদালত কিছু পর্যবেক্ষণও দেন। গত রোববার বিকেলে আলোচিত এই মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে যাবজ্জীবন পাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন হলেন বাসচালক মাসুম বিল্লাহ ও জোবায়ের সুমন এবং চালকের সহকারী আসাদ কাজী। খালাসপ্রাপ্ত দুই ব্যক্তি হলেন বাসমালিক জাহাঙ্গীর আলম ও চালকের সহকারী এনায়েত হোসেন। আপাত স্বস্তির এ রায়ে মানুষ সন্তুষ্ট হলেও বাসচালকের ফাঁসি চায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়ার পরিবার।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তার ওপর জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর ওঠে পড়ে। এতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ও ৯ জন আহত হন। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম। ওই দুর্ঘটনার দিনই ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন নিহত মিমের বাবা।

মামলার তদন্তে জানা যায়, একটি বাসের ফিটনেসের মেয়াদ দুই বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ট্যাক্স টোকেনেরও মেয়াদ ছিল না। অন্য বাসটির রুট পারমিটই ছিল না। আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ২৭৯, ৩২৩, ৩২৫, ৩০৪ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয় অভিযোগপত্রে। মিম ও করিমের মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে এক সপ্তাহ অচল ছিল ঢাকার সড়ক। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জেলায়। শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে হয় সরকারকে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবিতেই সংসদে পাস হয় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইন, যা গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।

অন্যদিকে, রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, বাসচালক ও চালকের সহকারীদের খামখেয়ালির কারণে নিরীহ ছাত্রছাত্রীসহ যাত্রীরা প্রাণ হারাচ্ছেন। তাদের কবল থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। চালকদের আরো সতর্ক হতে হবে। একই সঙ্গে চালকরা কোনোভাবেই যাতে হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাতে না পারেন, সে ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশদের আরো কঠোর ও দায়িত্বশীল হতেও বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাসমালিকদেরও দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। আদালত মনে করেন, চুক্তিতে ভাড়া দেওয়ার কারণে বাসচালক ও সহকারীদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়।

আমরা মনে করি, সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরনের হীন প্রতিযোগিতার নাগাল টানতে হবে। মানুষের জীবনমান রক্ষায় বাসচালক ও সহকারীদের আরো সচেতন হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মূল্যবান প্রাণ ঝরে গেছে। একেকটি দুর্ঘটনায় কত পরিবার যে পথে বসে যায়, তার খবর কি আমরা রাখি? মিম ও করিম নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার হয়েছে। আশা করি, বাকি বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন আইন ২০১৯ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো গতিশীল ও সচেষ্ট হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিচারিক প্রক্রিয়া,সম্পাদকীয়,সড়কে শৃঙ্খলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close