মুন সিনেমা হল মালিককে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ
রাজধানীর মুন সিনেমা হলের মালিক ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে দ্রুত ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ রোববার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে মৌখিকভাবে এই নির্দেশ দেন।
এ সময় আদালত বলেন, অর্থ পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট সকলকে তলব করা হবে। পরে এ বিষয়ে আগামী ১২ জুলাই শুনানির পরবর্তী দিনও নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মুন সিনেমা হলের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
গত ১৮ জানুয়ারি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী-সংক্রান্ত মুন সিনেমা হলের মামলায় হল মালিক ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে তিন কিস্তিতে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
আদেশ অনুসারে, প্রথম দুই মাসের মধ্যে ২৫ কোটি, দ্বিতীয় দুই মাসের মধ্যে ২৫ কোটি এবং অবশিষ্ট ৪৯ কোটি টাকা চলতি বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে বলা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দ্রুত ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে ফের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে।
ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়। এরপর ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান একটি সামরিক ফরমান ঘোষণা করেন, যাতে বলা হয়, সরকার কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়। কিন্তু ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস এরপর ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেন।
রায়ে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায় বহাল রাখেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট্রসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
এরপর দীর্ঘ দিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ তৎকালীন ভূমি সচিব, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে। ওই অভিযোগের শুনানি করেই আপিল বিভাগ সিনেমা হলের জমি, স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে সম্পত্তির মূল্য ৯৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
পিডিএসও/তাজ