reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ জুলাই, ২০১৭

নায়েফকে খেয়েছে পেইনকিলার!

ইসলামী রাজতন্ত্র সৌদি আরবের সদ্যসাবেক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে আসলে খেয়ে ফেলেছে তার পেইনকিলার গ্রহণের নেশা। গত ২১ জুন রাতে তাকে মূলত সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই রাতে রাজ প্রাসাদ থেকে ডাক আসে নায়েফের কাছে। বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের বার্তা পেয়ে তড়িঘড়ি করে ছুটে যান যুবরাজ নায়েফ। সেদিন তিনি যখন মক্কায় রাজপ্রাসাদের চতুর্থ তলায় গিয়েছিলেন বাদশাহর কাছে, তখন তিনি ছিলেন রাজসিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী। কিন্তু ভোরে যাখন যখন বের হন তখন আর তিনি আর রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সৌদিরা জানতে পারে, তাদের পরবর্তী বাদশাহ হতে চলেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

ওই এক রাতেই ৫৭ বছর বয়সী ভাতুষ্পুত্রকে সরিয়ে যুবরাজের আসনে নিজের ৩২ বছর বয়সী ছেলেকে বসিয়েছেন ৮১ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান। রাজ পরিবারের অনেকের মতে, এটা ছিল তার জন্য বজ্রাঘাত; এটা একটি ক্যু, যার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না নায়েফ। তেলসমৃদ্ধ প্রভাবশালী মুসলিম দেশটিতে ক্ষমতায় আকস্মিক এই পরিবর্তন কীভাবে হল, কার কী ভূমিকা ছিল, তার সুলুকসন্ধানে গিয়ে বিভিন্ন সূত্রে নানা তথ্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধম।

ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে বিন নায়েফ উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। বাদশাহর পর তিনি ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাবান। কিন্তু সালমান ভেতরে ভেতরে চ্যালেঞ্জ হয়ে হয়ে দাঁড়ান তার জন্য। নায়েফের ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি বলেন, ২১ জুন প্রাসাদে যাওয়ার পর তাকে পদত্যাগ করতে বলেন বাদশাহ সালমান। আনুগত্য স্বীকার করতে বলেন তার প্রিয়তম ছেলে মোহাম্মদের কাছে। নায়েফকে পদত্যাগ করতে বলার পক্ষে কী কারণ দেখানো হয়েছিল?

পদচ্যুত ক্রাউন প্রিন্সের ঘনিষ্ঠ সূত্রটি বলেছে, বাদশাহ এলেন বিন নায়েফের কাছে। শুধু তারাই ছিলেন কক্ষে। বাদশাহ বলেন, আমি চাই তুমি পদত্যাগ কর। এত বলার পরও আসক্তি কাটাতে তুমি কোনো চিকিৎসাই নিচ্ছ না, যা তোমার সিদ্ধান্ত গ্রহণে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিন নায়েফের এই আসক্তি হল পেইনকিলার ওষুধ নেওয়ার; যা তার ভাগ্যের আকাশ ঢেকে দিয়েছে মেঘে।

নায়েফের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা তার ঘনিষ্ঠরাও স্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, এটা ২০০৯ সালে এক আল কায়েদা হামলার ফল। তখন এক জঙ্গি তার প্রাসাদের সামনে আত্মঘাতী হয়েছিলেন, নায়েফ বেঁচে গেলেও তার দেহে থেকে যায় শার্পনেল। গত কয়েক বছরে নায়েফ সুইজারল্যান্ডে অন্তত ৩ বার চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন জানিয়ে প্রাসাদের একটি সূত্র জানায়, শার্পনেল বের করা যায়নি বলে মরফিনের মতো ওষুধের উপরই চলতেন তিনি।

স্বাধীন কোনো সূত্র থেকে নায়েফের ওষুধ আসক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি সাংবাদিকরা। প্রাসাদের কোনো কর্মকর্তাও এই বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, ওষুধ আসক্তির কারণ দেখিয়েই বাদশাহ সালমান পদত্যাগ করতে বলেছিলেন নায়েফকে। একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, সেদিন রাত ১১টায় রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক ডেকেছিলেন বাদশাহ সালমান। তার আগেই বাদশাহর ছেলে মোহাম্মদের ফোন পান বিন নায়েফ।

তখন তার কাছে এটি রুটিন কলই মনে হয়েছিল। নায়েফ উপস্থিত হওয়ার পর মোহাম্মদ বলেন, বাদশাহ তার অপেক্ষায় রয়েছেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সৌদি আরবের উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির সদস্যদের কাছে শাহী ফরমান যায়, যে কমিটিতে রাজ পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা থাকেন। একটি সূত্র জানায়, বাদশাহর নামে ফোন করে একটি চিঠি পড়ে শোনানো হয় সব সদস্যদের, যাতে লেখা ছিল- ক্রাউন প্রিন্সের আসক্তি চরমে উঠেছে, ২ বছর ধরে চেষ্টার পরও চিকিৎসা নেওয়ানো যায়নি তাকে।

বাদশার চিঠিকে উদ্ধৃত করে বিন নায়েফের ঘনিষ্ঠজন বলেন, এই রকম বিপজ্জনক অবস্থায় তাকে বাদ দেওয়াই যুক্তিযুক্ত এবং তার স্থলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে মনোনীত করা হোক। তিনি বলেন, ওই সময়ে প্রাসাদের একটি কক্ষে বিন নায়েফকে বলতে গেলে আটক রাখা হয়। সেখানে আর কেউ ছিল না। তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে তার দেহরক্ষীদেরও বদলে দেওয়া হয়।

এরপর রাজদূত ছোটেন উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর আনতে। ৩৪ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জন বাদে সবাই বিন নায়েফের পদচ্যুতির সিদ্ধান্তে সই করেন। যে ৩ জন নায়েফের পক্ষে ছিলেন তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ বিন আবদুল আজিজ, প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর পরিবারের প্রতিনিধি আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ ও রিয়াদের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ বিন সাদ।

রাজপ্রাসাদের একটি সূত্র জানায়, যারা বাদশাহর সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন তাদের সবার ফোন কল রেকর্ড করা হয় এবং তা বিন নায়েফকে শোনানো হয়। তাকে বোঝানো হয় যে তোমার পক্ষে কেউ নেই। রাতভর চিন্তার পর ভোরের আগেই হাল ছেড়ে দেন নায়েফ; তিনি প্রাসাদের উপদেষ্টাকে বলেন যে বাদশাহর সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। খুব সংক্ষিপ্ত একটি বৈঠকেই সব সারা হয়ে যায়। পদত্যাগে রাজি হওয়ার কথা জানিয়ে কাগজে সই করে দেন তিনি।

বাদশাহর কক্ষ থেকে বেরিয়েই অবাক হয়ে যান বিন নায়েফ; বাইরে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান, নতুন যুবরাজ। তাকে আলিঙ্গন করেন বিন নায়েফ, হাত ধরে চুমু খান আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে। এরপর বেরিয়ে যান তিনি; ততক্ষণে মোহাম্মদের সঙ্গে তার ছবি ও শাহী ফরমান রাজপ্রাসাদ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় গণমাধ্যমে। সবাই জেনে যায় বিন নায়েফের বিদায়ের খবর। সূর্য উঠা এক সকালে নিজের সূর্য ডুবিয়ে বাড়ি ফেরা বিন নায়েফ এখন কার্যত গৃহবন্দি।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নায়েফ,পেইনকিলার,সৌদি আরব,ইসলামী রাজতন্ত্র
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist