reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ আগস্ট, ২০১৮

অটল বিহারী বাজপেয়ী আর নেই

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী মারা গেছেন। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর ৯৩ বছরে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস) হাসপাতালে বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

নয় সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে থাকাকালেই বাজপেয়ীর স্বাস্থ্য গত মঙ্গলবার থেকে খারাপ হতে শুরু করে। কিডনিতে সংক্রমণ, বুক ধড়ফড় ও প্রস্রাবজনিত সমস্যা নিয়ে গত ১১ জুন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন ভারতের এ দশম প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালে ভর্তির পর চারবার বাজপেয়ীকে দেখতে যান ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এছাড়া, উপরাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইড়ু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপিপ্রধান অমিত শাহ ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা এল কে আদভানি বৃহস্পতিবারেও অসুস্থ বাজপেয়ীকে দেখে এসেছিলেন।

অনেক দিন ধরেই কিডনি সমস্যার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে বাজপেয়ীর স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে শুরু করে। অসামান্য বাগ্মীতার জন্য খ্যাতি কুড়ানো বাজপেয়ী সম্প্রতি কয়েক বছরে কথা বলার ক্ষমতাও অনেকটাই হারিয়েছিলেন।

শানিত যুক্তি আর অসাধারণ কথনের জন্য দলমত নির্বিশেষে প্রশংসিত ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০৯ সালে স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে তার স্মৃতিশক্তি এবং কথা বলার শক্তি লোপ পায়। গত তিন দিনে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হলেও আর শেষ রক্ষা হয়নি।

১৯২৪ সালে জন্ম নেওয়া বাজপেয়ী এইমস হাসপাতালের পরিচালক ও পালমনোলজিস্ট ড. রনদীপ গুলেরিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গুলেরিয়াই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

কিডনি, পরিপাক তন্ত্র, শ্বাসনালী ও হৃদরোগ বিভাগের একদল চিকিৎসকও বাজপেয়ীর দেখভাল করেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

তিন দফায় ভারত সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। প্রথমে ১৯৯৬ সালে মাত্র ১৩ দিনের জন্য, এরপর ১৯৯৮ সালে ১৩ মাস ও পরে ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত টানা প্রায় ছয় বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন তিনি।

এ বিজেপি নেতাই এ পর্যন্ত ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের বাইরে একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি প্রধানমন্ত্রীত্বের পুরো মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন।

২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাজপেয়ীকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়াও তুখোড় এক সাংসদ, কবি, বাগ্মী এবং গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশ তাকে মনে রাখবে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও কখনো অবসর পেলেই কাব্যচর্চা করতেন বাজপেয়ী।

একসময় তিনি যোগ দেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি সরকারে মন্ত্রী হন তিনি। কিন্তু পরে সঙ্ঘ-পন্থি অন্য নেতাদের সঙ্গে বাজপেয়ীও জনতা পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে গড়ে তোলেন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ১৯৮০ সালে দলটির প্রথম সভাপতিও হন তিনি। এর ১৬ বছর পর বাজপেয়ী প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন।

২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ’র হারের দায় কাঁধে নিয়ে প্রধান বিরোধী দলনেতার পদ আর নেননি বাজপেয়ী।

এরপরই তিনি ধীরে ধীরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। পরে স্বাস্থ্যর অবনতি হতে থাকলে গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে বাসভবনের ভেতরই অন্তরীন করে রেখেছিলেন এ বর্ষীয়ান নেতা। এবার তিনি জীবন থেকেই বিদায় নিলেন।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অটল বিহারী বাজপেয়ী,নেই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close