তহিদুল ইসলাম, জাবি

  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭

চায়ের কাপে বন্দি শৈশব!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যালয়ের সপ্তম ছায়া মঞ্চ সংলগ্ন স্থানে বসে ব্যাডমিন্টন খেলা দেখছে কয়েক শিক্ষার্থী। ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৮টা। অল্প বয়সী দুটি ছেলে দৌড়ে গিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বললো, ‘চা! চা! চা খাবেন ভাই?’ যেন চা খাওয়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বুঝতে বাকি রইলো না রাত যত গভীর হচ্ছে চা বিক্রি করে বাড়ি ফেরার তাড়না তত বাড়ছে ওদের। আর এ কারণে চায়ের পাত্রটা শেষ করতে পারলেই যেন দিনটির মত হাফ ছেড়ে বাচে ওরা। ওরা আর কেউ না। ওরা ক্যাম্পারেরই শিশু চা বিক্রেতা। শিক্ষার্থীদের কাছে ফেরি করে চা বিক্রি করে। কথা হলো ওদের সাথে। এদের একজন সাগর। বয়স নয় বছর।

দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সাগর জানায়, দিনে ২০০ টাকার মতো আয় হয় তার। বেলা ২টা থেকে ৩টার দিকে ক্যাম্পাসে আসে। আবার রাত ১০টার দিকে বাসায় চলে যায়। পিতা অন্যের নারিকেল গাছ পরিস্কার করে সামান্য আয় করে। আর মা অন্যের বাসায় কাজ করে। পড়তে ভীষণ ভালো লাগে তার। তবে চা বিক্রির কারণে পড়ার সময় পায় না সে। বিকেলে যে সময়টায় সে চা বিক্রি করে তখন তার অনেক বন্ধু খেলা করে সময় পার করে। এতে তার মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়। তবে পিতা-মাতার আয় দিয়ে সংসার চালানো দায় বলে বাস্তবতা মেনে নিয়েছে সে।

আরেক জন ১০ বছরের মেহেদী হাসান। মেহেদী বলে, ‘চা বিক্রি করতে একদমই ভালো লাগে না। বাবা দিন মজুর। মা ও পরের বাড়িতে কাজ করে। মা-বাবা যে টাকা পায় তা দিয়ে হয় না তাই চা বিক্রি করি।’ সুযোগ পেলে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় মেহেদী। বড় হয়ে সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানায় সে।

ক্যাম্পাসে সাগর কিংবা মেহেদীর মতো প্রায় দু’ডজন শিশু আছে যারা চা কিংবা বাদাম, ডিম, সিগারেট ইত্যাদি বিক্রি করে দরিদ্র পিতা মাতাকে সংসার চালাতে সাহায্য করছে। দুপুর হলেই এরা ক্যাম্পাসে চলে আসে। কোন দিন বিক্রি ভালো হয়। আবার কোন কোন দিন খালি হাতে ফিরতে হয় তাদের। এই যেমন তামিম নামে এক শিশু চা বিক্রেতা বলে, ‘ভাই, এক কাপ চা নেন। আজ বেশি বিক্রি করতে পারিনাই। মাত্র ২৫ টাকা হইছে।’

ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী এসব শিশুদের অনেকেই স্কুলে যায়। তবে পরিবারের অভাব অনটনের কারণে দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থানের জন্য এই বয়সেই কর্মে নেমে পড়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানের খাবারের হোটেল, হলের ক্যান্টিন, মেস প্রভৃতি পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট আছে প্রায় শতাধিক শিশু শ্রমিক। শৈশবের দূরন্তপনা এসব শিশুদেরকে টানে না। যে বয়সে ওদের দূরন্তপনায় মেতে ওঠার কথা সে বয়সেই ঘানি টানছে সংসারের।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চায়ের কাপে বন্দি শৈশব!
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist