জাহিদুল হাসান, জবি

  ২২ মার্চ, ২০২৪

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন

প্রভাষক ইমন বহিষ্কার, চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিমকে অব্যাহতি

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে অসহযোগিতা করায় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জুনায়েদ আহমেদ হালিমকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।

এর আগে ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ফিল্মস অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের এক ছাত্রী। গত মঙ্গলবার তিনি রাষ্ট্রপতি বরাবর লিখিত আবেদনও করেন।

রাষ্ট্রপতি বরাবর লেখা আবেদনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লেখেন, তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বুলিং ও যৌন নির্যাতনের বিচার চেয়ে ২০২১ সালে ডিসেম্বরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন করেন তিনি। বর্তমান উপাচার্যও ওই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু তিনি এখনো বিচার পাননি, উল্টো তাকে অভিযুক্ত শিক্ষক ও তার সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান, স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকেরা তাকে ভীষণরকম বহিষ্কার ভয়ভীতি, পরীক্ষার অকৃতকার্য করানো, অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এখনো তাকে মৃত্যুহুমকি দিয়েই যাচ্ছে, আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে তিনি এই দুর্ভোগের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করেন।

আবেদনে রাষ্ট্রপতির প্রতি ভরসা প্রকাশ করে তাকে বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও প্রশাসনের জবাবদিহির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানান। সেই সঙ্গে তাকে অকৃতকার্য করানো বিষয়গুলো বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পুনঃবিবেচনা করে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আর্জি জানান তিনি।

এদিকে গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ দিতে যান ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করে। আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে। আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। কখন আমাকে মেরে ফেলা হয়, সেটা জানি না। শুধু আমি না, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এবং হেনস্তা করছে। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। আমার অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।’

অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে বহিষ্কার ও অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক প্রভাষক আবু শাহেদ ইমনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযুক্ত অপর শিক্ষক অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিমকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অব্যাহতি,চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম,বহিষ্কার,প্রভাষক ইমন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close