শুভ দে, মাভাবিপ্রবি

  ০৭ মার্চ, ২০২৪

পছন্দের বই কিনতে পেরে শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশি

মাভাবিপ্রবিতে বইমেলায় পাঠকদের ঢল

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গনে তিন দিনব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। বই মেলায় পাঠকদের বই ঢল নামে। বই মেলা, বাঙালির প্রাণের মেলা। বইমেলা মানুষের চিন্তার পরিমাপক। এর মাধ্যমে মানুষের রুচি ও আদর্শের উন্নতি ঘটে। বই পড়ে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে হয় উদার মহীয়ান। আর মহীয়ান মানুষই জাতিকে করে উন্নত। তাই শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসারে বইমেলার অবদান অপরিসীম। তাই যেখানে বইমেলা সেখানে ছুটে যান বইপ্রেমীরা।

বই হচ্ছে মানুষের সেই বন্ধু, যার জাগতিক কোনো শরীর নেই, কিন্তু সে ধারণ করতে পারে সমগ্র মহাবিশ্বকে। যার পরতে পরতে লুকায়িত আছে এক অনন্ত অসীম ঐশ্বর্য। যে সেই অপার ঐশ্বর্যে ডুব দিয়েছে একাগ্র সাধনায়, সে পেয়েছে বইয়ের নিজস্ব সত্তার আসল অকৃত্রিম ভান্ডার, সে হয়ে উঠেছে বইয়ের অবিচ্ছেদ্য প্রেমিক। বইমেলা বইয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ায়। মেলা শুরু হলে বই কেনার প্রতি বিশেষ তাগিদ অনুভব করি পাঠকরা।

তিন দিনব্যাপী বই মেলার শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রবেশ পথ দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে লোকজন মেলায় প্রবেশ করছেন। সব শ্রেণী-পেশার মানুষই আসছেন মেলায়। মূল স্টল-প্যাভিলিয়নে যাচ্ছেন পাঠকরা। কেউ বই কিনছেন, কেউ পছন্দের বই পাতা উল্টিয়ে দেখছেন, কেউবা সেলফি তুলছেন। মেলায় মা-বাবার সঙ্গে অনেক শিশু-কিশোররাও এসেছে। এই মেলায় সাহিত্য, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের বই, সায়েন্স ফিকশন, বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের বই, শিশুতোষ ও কিশোর সমগ্র, ছোট গল্পের বইসহ বিভিন্ন লেখকের প্রায় ২ হাজার বই স্থান পেয়েছে। মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বইও উঠেছে। ঢাকা গিয়ে বই কেনা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। মেলায় বই কিনতে পেরে শিক্ষার্থীরা আনন্দিত।

বইমেলায় আসা গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত তরফদার রোহান বলেন, পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য যেমন আমাদের অন্ন প্রয়োজন তেমনি মনের ক্ষুধা মেটানোর অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে বই পড়া। পুঁথিগত বিদ্যার মাধ্যমে আমরা ডিগ্রী অর্জন করতে পারব কিন্তু বাইরের জগতকে জানতে হলে কিংবা একাটি সমাজ, দেশ বা রাষ্ট্রের ইতিহাস সংস্কৃতি শিক্ষা সম্বন্ধে জানতে হলে আমাদের বই পড়তে হবে। শিক্ষার্থীদের বেশি করে পড়া উচিত। তাই বইকে হাতের কাছে এনে দেওয়ার জন্য বইমেলার আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী স্বপন চন্দ্র বর্মণ বলেন, মেলায় এসেছি পছন্দের লেখকের বই কিনতে। বইমেলায় এসে আমি অনেক বেশি অনুপ্রাণিত। বই আমাদের প্রকৃত বন্ধু। বইমেলাতে এসে মনে হল আমাদের ভালো বন্ধুত্বের মতো বইয়ের সাথেও প্রকৃত বন্ধুত্ব হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যত নিবিড় ও ঘনিষ্টতর হবে, সেই মানুষ তত উন্নত চিত্তের অধিকারী হবে।

বই মানুষের মনের ভেতরে জ্ঞানের আলো এনে যাবতীয় অন্ধকারকে দূর করে চেতনার আলোকে সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে দেখায়। আলো শুধু ভৌগোলিকভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে। আর বই অতীত থেকে ভবিষ্যৎ, কাছ থেকে দূরে, প্রান্ত থেকে অন্তে এমনকি যুগ থেকে যুগান্তরে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতে পারে। তাই দেশকালের সীমানা অতিক্রম করে জ্ঞানের আলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে একমাত্র বই। শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হল আত্মশিখন। আর বই সেই আত্মশিখনের শ্রেষ্ঠ সহায়ক। বিনোদন থেকে শিক্ষা, অবসর যাপন থেকে নিঃসঙ্গতা দূর সবেতেই বই শ্রেষ্ঠ অবলম্বন হতে পারে।

বইমেলার আয়োজক ও প্রথম আলো বন্ধু সভার মাভাবিপ্রবি শাখার সভাপতি ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা বিস্তার, গবেষণা, পাঠকদের বই পড়ার আগহ ও জ্ঞানের বিকাশ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বইমেলা হওয়ায় গত কয়েক বছরে অনেক পাঠক তৈরি হয়েছে। স্থানীয় লেখকরাও তাদের বই পাঠকদের কাছে বইমেলার মাধ্যমে সহজে পৌঁছে দিতে পারছেন।

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বই মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ আর এম সোলাইমান, শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মীর মো. মোজাম্মেল হক, জনসংযোগ ও প্রেস প্রকাশনা দপ্তরের অফিস প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক প্রমুখ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাভাবিপ্রবি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close