সম্পাদকীয়
বাণিজ্যযুদ্ধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র
নতুন কিছু নয়। বাণিজ্যরীতি চালুর শুরু থেকে এই প্রতিযোগিতা। উৎপাদন ও চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। বেড়েছে মুনাফা। এই মুনাফাকে একচেটিয়া করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা এখন তুঙ্গে।
আর সেই প্রতিযোগিতায় আজ দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্ববাজারে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরো কিছু দেশ ইতোমধ্যেই সম্পৃক্ত হতে বাধ্য হয়েছে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার অর্থনীতিতে নীতিগত কিছু পরিবর্তন আনার কারণে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই দুই পরাশক্তির টানাপড়েনের কারণে কপাল খুলতে পারে বাংলাদেশের মতো কিছু কিছু দেশের। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তে পারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি।
চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক তৈরি ও বিক্রেতাদের সংগঠন ইউএস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএপআই) পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে চীন থেকে পোশাক আমদানির পরিমাণ অনেক কমে যাবে। প্রতিষ্ঠানের বেঞ্চ মার্কিং স্টাডি-২০১৮-তে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশনশিল্পগুলোতে পোশাক সরবরাহকারী দেশের তালিকায় গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। এ বছর তা পঞ্চমে এসে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, চীনের একচেটিয়া দখলে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকশিল্পের বাজারের বেশ কিছু অংশ বাংলাদেশের দখলে আসার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানির পরিমাণ রেকর্ড মাত্রায় বাড়বে। অনেকের মতে, এ রফতানির পরিমাণ চলতি সালের চেয়ে ৩২ গুণ বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল; যা ২০২০ সালের মধ্যেই ঘটবে। একই সঙ্গে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে উদ্যোক্তাদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়াতে হবে। কোনোক্রমেই যেন পচা শামুকে পা না কাটে, সেদিকে নজরদারিকে বহুলাংশে বাড়ানোই হবে সময়ের দাবি। এখনো যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান গুণগত মানের সীমারেখাকে স্পর্শ করতে পারেনি, তাদের এখন থেকে সে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত থাকতে হবে। কোনো ধরনের অবহেলা অনেক বড়মাপের লাভ থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করতে পারে। সুযোগ সব সময় সদর দরোজায় এসে কড়া নাও নাড়তে পারে।
সুতরাং বিশ্ব বাণিজ্যের এই টানাপড়েন কালে চোখ-কান খোলা রেখে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই হবে মেধাবী সিদ্ধান্ত। আমরা মনে করি, বাজারে আমাদের প্রতিযোগীর অভাব নেই। এদের কথা মাথায় রেখে এই বাণিজ্যে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক আচরণের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে। বিশ্ববাজারে আমাদের পোশাকশিল্পের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। সেই সুনামকে অক্ষুণ্ন রেখেই আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হব বলেই আমাদের বিশ্বাস।
পিডিএসও/তাজ