চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০২ জুলাই, ২০২০

প্রতিদিন বিক্রি ৪০ কোটি টাকা

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ

শতভাগ নিরাপদ ও পরিপক্ব করেই বাজারজাত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম এখন আমের রাজধানী। বাজারজাত হচ্ছে নানা জাতের সুস্বাদু সব আম। দেশসেরা ও জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লক্ষণা ও নানা জাতের গুটি আম এখন পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও প্রাকৃতিক বৈরিতায় আমের উৎপাদন অনেক কম হলেও; এবার ভালো দাম পাওয়ায় খুশি এখানকার চাষিরা। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার আম।

গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আম বেচাকেনা চললেও; চাঁপাইনবাবগঞ্জে মূলত আমের বাজার জমে উঠেছে চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে। দেশজুড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুখ্যাতি থাকায় জেলার পাইকারি বাজারগুলোতেও আনাগোনা বেড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যাপারীদের। এতে চাঙ্গা হচ্ছে আমনির্ভর এ জেলার অর্থনীতি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমচাষি ও ব্যাপারীদের হাঁকডাকে এখন মুখর দেশের সবচেয়ে বড় আমের পাইকারি বাজার কানসাটসহ জেলার রহনপুর, ভোলাহাট এবং সদরঘাট আমবাজার। জেলাজুড়ে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার আম। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আমের বাজার করোনাকালে আমের বাজার ও দাম পাওয়া নিয়ে আমচাষিদের মাঝে যে দুশ্চিন্তা ছিল ভালো দাম পাওয়ায় তা কেটে গেছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও প্রাকৃতিক বৈরিতায় আমের উৎপাদন এবার অনেক কম হলেও শতভাগ নিরাপদ এবং চাহিদা ভালো থাকায় এবার আমের দামও বেশ চড়া। এতে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন চাষিরা। তবে চাহিদা ভালো থাকায় দাম নিয়ে খুব একটা অভিযোগ নেই বাইরে থেকে আম কিনতে আসা ব্যাপারীদের। যদিও স্থানীয় এবং খুচরা ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার আমের দাম গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

বর্তমানে জেলার বাজারগুলোতে বিভিন্ন জাতের আমের জন্য বিভিন্ন ধরনের দাম পাচ্ছেন বিক্রেতারা। কানসাট আম বাজারে কথা হয় বেশ কয়েকজন চাষির সঙ্গে। এ সময় চাষিরা জানান, এবার আমের উৎপাদন কম হলেও ভালো দাম পাওয়ায় তারা খুশি। করোনাকালে আমের চাহিদাও ভালো।

বিনোদপুর এলাকার আমচাষি আসাদুল ইসলাম জানান, এবার আমের উৎপাদন কম হলেও শুরু থেকেই আমরা ভালো দাম পাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত এই দাম অব্যাহত থাকলে আশা করছি। এবার বিগত সময়ের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আমের বাজার শিবগঞ্জের কালুপুর এলাকার চাষি আহসান হাবীব জানান, এবার তিনি ৭ বিঘা জমিতে খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ব্যানানা জাতের আম চাষ করেছেন। সাত বিঘা জমিতে আম চাষে তার খরচ হয়েছে পৌনে ৩ লাখ টাকা। আশা করছেন আম বাজারজাত করে খরচ বাদ দিয়ে এবার তার লাখ দুয়েক টাকা লাভ আসবে।

সদরঘাট আম বাজারে কথা হয় আমচাষি ও ব্যবসায়ী বরজাহান আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে এবার শুরু থেকেই আমের দাম পাওয়া নিয়েও সংশয় ছিল। তবে কাক্সিক্ষত দাম পাওয়ায় সে সংশয় দূর হয়েছে। বিশেষ করে ঈদের সময়েও সারা দেশে লকডাউন থাকার কারণে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে সারা দেশে আম পাঠানো যাবে। আমচাষিরা আসবেন। আমের দাম মিলবে। তবে এখন সব শঙ্কা দূর হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার আমচাষিরা আমের ভালো দাম পাচ্ছেন। উৎপাদন কম হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সব আমই বিক্রি হচ্ছে বেশ চড়া দামে।

বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ খিরসাপাত বিক্রি হচ্ছে কোয়ালিটি অনুযায়ী ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়, ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়, লক্ষণা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় এবং বিভিন্ন জাতের গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে।

আম ব্যবসায়ী ও শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল খান শামীম বলেন, ‘ল্যাংড়া, লক্ষণা ও গুটি আমের দাম গত এক সপ্তাহ থেকে একই রকম থাকলেও; প্রতিদিনই বাড়ছে খিরসাপাত আমের দাম। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলছেন উৎপাদন কম হওয়ায় শেষ হয়ে আসছে খিরসাপাত আম। এখন আর আমের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। চলতি সপ্তাহে প্রতিটি জাতের আমের দাম আরো বাড়বে।

কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি কাজী এমদাদ জানান, প্রতিদিন আমবাগান ও জেলার পাইকারি বাজারগুলো থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কানসাট আম বাজারে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার আম। সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে বেচাকেনার পরিমাণ। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে বাগান থেকে আম সংগ্রহ ও আড়তগুলোতে আম প্যাকেজিংয়ের কাজে বেড়েছে মৌসুমি কর্মসংস্থানও।

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে আম বাজারজাতকরণ ও পরিবহনে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করায় খুশি আম সংগঠনের নেতারা। ‘বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিউসার মার্চেন্ট অ্যাসেসিয়েশনের’ সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ জানান, ‘আমের ন্যায্যমূল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং আগামীতে আমচাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ভারতীয় আম আমদানি না করার দাবি জানাচ্ছি।’

আর স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, ‘ফলন কম হলেও; করোনা পরিস্থিতিতে উপযুক্ত বাজার ব্যবস্থাপনা এবং দেশব্যাপী আম পরিবহনে উদ্যোগ নেওয়ায় এবার কৃষকরা আমের ভালো দাম পাচ্ছেন। আর আম আমদানির বিষয়ে সরকারের এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। আর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক ট্রন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাইয়ের শুরুতে বাজারে আসবে আম্রপালি, ফজলি, ব্যানানা ম্যাংগো, বারি-৪, কোয়াপাহাড়ি, ফনিয়া, আরাজাম, জহুরি ও মল্লিকা। আর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে পাওয়া যাবে আশ্বিনা, গৌড়মতি ও কাটিমন, যা বাজারে থাকবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close