মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর)

  ১৭ আগস্ট, ২০১৯

বেনাপোলে ভারত ফেরত যাত্রীদের ভিড় : টিকিটের জন্য হাহাকার

সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢুকে গন্তব্যে যেতে মিলছে না বাসের টিকিট। তেমনি লম্বা ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ শেষে ঢাকা ফিরতে মহাবিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। বাস, ট্রেন কোথাও টিকিট নেই। দ্বিগুণ চাহিদা বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের। এ কারণে ঈদে নাড়ির টানে গ্রামে আসা মানুষের কর্মস্থলে ফিরতে এসি দূরে থাক চেয়ার কোচেরও টিকিট মিলছে না।

স্থানীয়রা ঈদের আগেই বেনাপোল চেকপোস্ট, নাভারন ও বাগআঁচড়ার বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে কিছু চেয়ার কোচের টিকিট সংগ্রহ করে কর্মস্থল ঢাকা, চট্টগ্রামে ফিরছেন। কিন্তু আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো বাসের টিকিট নেই। বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেসেরও (ট্রেনের) টিকিট নেই। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন, ভারত ফেরত যাত্রীরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের ছুটি ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশে ফিরে গন্তব্যে যেতে কোনো টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না।

সেই সঙ্গে টিকিটের দামও বাড়িয়েছেন বাস মালিকরা। ১ হাজার ৩০০ টাকার এসি বাসে নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নন এসিতে নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। ট্রেনের টিকিটও চলে গেছে দালালদের হাতে। বেশি টাকা দিলে দুই থেকে চারটি টিকিট মিলছে। কাউন্টার থেকে টিকিট নেই বলা হলেও ট্রেনের মধ্যে অনেক আসন খালি দেখা যাচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বেনাপোল থেকে দেশের অভ্যন্তরে দূরপাল্লার গন্তব্যের যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। শনিবার তা অনেকটা বেড়ে যাবে। রোববার থেকে অফিস আদালত খুলছে, তাই কর্মস্থলে ফিরতেই হবে।

রাজধানীর মিরপুরের খন্দকার বশির আহমেদ ঈদের লম্বা ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসা ও বেড়ানোর জন্য। তিনি জানান, শুক্রবার সকালে ভারত থেকে ফিরেছেন। কিন্তু বেনাপোল থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য কোনো পরিবহনের টিকিট এখনো পাননি। তবে রাতের গাড়িতে টিকিট দেবে বলে একটি বাসের ম্যানেজার কথা দিয়েছেন।

ভারত ফেরত যাত্রী তাঁতীবাজারের প্রদীপ সরকার বলেন, চিকিৎসা শেষ করতে এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। রোববার অফিস খুলবে। এখন জরুরি ঘরে ফেরা প্রয়োজন। বাসে তো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। যশোর থেকে কোনো এয়ারলাইন্সেরও টিকিট নেই। যেভাবেই হোক গন্তব্যে ফিরতে হবে।

বেনাপোলের ধান্যখোলা গ্রামের শামছুল আলম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে এসে আর কর্মস্থলে ফিরতে পারছি না। বাস ও ট্রেনে কোনো টিকিট নেই।

বেনাপোর স্থলবন্দরের এয়ার টিকিট এজেন্ট ‘টাইম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের’ প্রতিনিধি হাসান বলেন, সড়কপথে বেহাল অবস্থার কারণে দিন দিন আকাশপথে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। চাপ বাড়ায় এবার ঈদে এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়িয়েছে। তারপরও সংকট থেকে যাচ্ছে। ঈদের পরের দিন থেকে অধিকাংশ প্লেনের টিকিট নেই। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তিনি।

বেনাপোল চেকপোস্টের ‘রাজা বাদশা মানি চেঞ্জারের’ স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, চিকিৎসা ও ভ্রমণের কাজে এ পথে দিন দিন যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও চাহিদা অনুযায়ী দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা বাড়েনি। প্রতি বছর ঈদ, পূজাসহ বিশেষ উৎসবের সময় এ রুটে বাসের টিকিট না পেয়ে যন্ত্রণা ভোগ করতে দেখা যায় পাসপোর্ট যাত্রীদের। একটি ট্রেন দিলেও তাতেও টিকিট থাকে না।

বেনাপোলের সবচেয়ে বেশি বাস চলাচলকারী সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ঈদের ছুটিতে যারা কর্মস্থল ঢাকা থেকে বেনাপোল ও শার্শায় এসেছেন তারা ছুটি শেষে আবারও কর্মস্থলে যোগদানের জন্য ছোটাছুটি শুরু করেছেন। আমাদের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করি বিধায় সব কাউন্টার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে ফেলেছে। আগামী ২০ আগস্ট পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই। এসি বাসের টিকিট ভারত থেকে বিক্রি হয়ে যাওয়ায় আমরা স্থানীয়দের কোনো টিকিট দিতে পারছি না।

কর্মস্থলে ফিরতি যাত্রীদের নিয়ে তার কোম্পানির প্রায় ১৫টি এসি, নন এসি বাস প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশে বেনাপোল ত্যাগ করছে। ভাড়া রাখা হচ্ছে এসি ১ হাজার ৪৫০ টাকা ও নন এসি চেয়ার ৬০০ টাকা। তবে অনেকে এসি বাসের টিকিট না পেয়ে চেয়ার কোচের টিকিট সংগ্রহ করেছেন।

তিনি বলেন, আগে চেয়ার কোচের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু এখন এসি বাসের চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে দ্বিগুণ। সবাই একটু আরামে যাতায়াত করতে চান। তারা খরচের দিকে না তাকিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তাকান। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) শার্শা উপজেলা কমিটির সভাপতি সাজেদুর রহমান বলেন, বিগত দিনের চেয়ে বেনাপোল শার্শার মানুষের ঢাকামুখী কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বেনাপোলে এসি বাস ও ট্রেনের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close