নিজস্ব প্রতিবেদক
সামরিক বাহিনী প্রধানদের সম্মেলন
শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রশংসা জাতিসংঘের
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অসামান্য অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেছে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিবের অ্যাকশন ফর পিসকিপিং এজেন্ডায় বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকারও প্রশংসা করেন তারা। জাতিসংঘ সদর দফতরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশগুলোয় ‘সামরিক বাহিনী প্রধানদের সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। গত বুধবার শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার। সম্মেলনের স্বাগত অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল বাংলাদেশ।
এছাড়া একই দিন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ত্রি-পক্ষীয় সহযোগিতা শক্তিশালীকরণবিষয়ক একটি আলোচনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের চলতি জুলাই মাসের সভাপতি পেরু এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ত্রি-পক্ষীয় সহযোগিতা শক্তিশালীকরণবিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রণে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে সামনের সারির একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবদান ও সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে মর্যাদাপূর্ণ এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে মনোনীত করে জাতিসংঘ সদর দফতর। কালজয়ী বাংলা গান ও বাঙালি খাবারে অতিথিদের আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিতে আবহমান বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
‘সামরিক বাহিনী প্রধানদের সম্মেলনে’ বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ড. মাহফুজুর রহমান, জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া, জাতিসংঘের অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুলখারে এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাডভাইজর লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্লোস হামবার্টো লয়টে। জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়া বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সুদীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গৌরবের সঙ্গে অবদান রেখে চলছে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সেরা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
জাতিসংঘ মহাসচিবের অ্যাকশন ফর পিসকিপিং এজেন্ডায় বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকারও তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের এই সফলতা বাংলাদেশের সক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ। শান্তিরক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
জাতিসংঘের অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুলখারে বলেন, এমন চমৎকার আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। জাতিসংঘের নীল হেলমেটের অধীনে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান ও আত্মোৎসর্গের প্রতি তিনি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। তিনি কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সদস্যদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বিশ্বকে আরো শান্তির্পূণ করতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রজ্ঞা, অংশীদারিত্ব, সমর্থন ও সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। অন্যদিকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাডভাইজর লেফটেন্যান্ট জেনারেল কার্লোস হামবার্টো লয়টে তার বক্তব্যে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শান্তিরক্ষী হিসেবে অভিহিত করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী মিলিয়ে ৬৪ জন সামরিক প্রধান এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া সদস্য দেশগুলোর উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৪০০ অতিথি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের মিলিটারি অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার খান ফিরোজ আহমেদ ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মিস সাদিয়া ফয়জুন্নেছা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মিশনের মিলিটারি অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার খান ফিরোজ আহমেদের মেয়ে ফাবিহা তাহসিন।
"