সমন্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে জ্বালানি খাতে সমন্বিত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই। এছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, আইসিটি, জাহাজ নির্মাণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, পর্যটন অবকাঠামো, ব্লু-ইকোনমি এবং পাট শিল্পের মতো খাতে পারস্পরিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়া দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, এসব পরিকল্পনা ও দুই দেশের মধ্যে করা সাত চুক্তি দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার এক যুক্ত বিবৃতিতে এই কথা জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে তার তিন দিনের সফরের শেষ দিনে এই যৌথ বিবৃতি এলো।

বিবৃতিতে বলা হয়, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার জোগান দিতে বাংলাদেশে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহসহ সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) চুক্তির আওতায় দুই দেশ জ্বালানি খাতে সমন্বিত সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে। এতে বলা হয়, পেট্রোকেমিক্যাল, সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, কারিগরি সহযোগিতা ও সক্ষমতা উন্নয়নের মতো খাতে দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমম্বিত সহযোগিতায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়া সম্মত হয়েছেন।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৩৫তম বার্ষিকীতে সুলতান বলকিয়ার আমন্ত্রণে ব্রুনাই দারুসসালামে তিন দিনের সরকারি সফর শেষে শেখ হাসিনা গতকাল রাতে দেশে ফেরেন। ব্রুনাই দারুসসালাম বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের সুযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘হালাল ফুড মার্কেটে’ প্রবেশের সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হালাল ফুড শিল্পে ব্রুনাইয়ের দক্ষতা প্রমাণিত। পারস্পরিক চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা আরো জোরদার করবে উভয় দেশ। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল নিয়োগ ও ওষুধ উৎপাদন এবং বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে কার্যকর সুযোগ সুবিধা দিতে আর্থিক কার্যক্রম জোরদারে দুই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রতি উভয় পক্ষ জোর দিয়েছে।

অভিন্ন স্বার্থ এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), কমনওয়েলথ এবং আশিয়ান আঞ্চলিক ফোরামসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা আরো জোরদারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। আশিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অব্যাহত চেষ্টার প্রতি দুই নেতা সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং এই সম্পর্ক উন্নয়নে পারস্পরিক লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তারা সম্মত হয়েছেন ।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতা প্রদান এবং তাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগের প্রতি ব্রুনাই দারুসসালাম সমর্থন দিয়েছে। এতে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ায় পাশাপাশি তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টার জন্য ব্রুনাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। আর অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য সুলতানের সরকার এবং কক্সবাজারে ফিল্ড হাসপাতালে জরুরি ওষুধ ও স্বাস্থ্য উপকরণ সরবরাহ এবং আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ইয়াং ডি পারতুন অব ব্রুনাই দারুসসালামের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি লাভ এবং সামাজিক খাতে অসামান্য সাফল্য অর্জন করায় ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত করা ও স্বীকৃতি লাভ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ নির্ধারিত যোগ্যতার মানদন্ড সফলভাবে পূরণ করায় অভিনন্দন জানান। ব্রুনাই খাদ্য ও কৃষি খাতে বাংলাদেশের সফলতা স্বীকার করেছে এবং কৃষি, মৎস্য চাষ এবং গবাদি পশু পালন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষ কৃষি ও খাদ্য পণ্য খাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্ভাবনা অন্বেষণ করবে এবং জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে সহযোগিতা করবে।

উভয় পক্ষ বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে সক্ষমতা অর্জন, জ্ঞান বিনিময়, শান্তি স্থাপন এবং মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে গভীর সহযোগিতা প্রদান উৎসাহিত করবে।

"