তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম

  ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বহুল প্রতিক্ষিত বে-টার্মিনাল

বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুণ * ভিড়তে পারবে মাদার ভেসেলের মতো বড় জাহাজ

বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকা এই টার্মিনালের জন্য ৮৮৮ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানা এবং ৮২০ একর খাস জমি। কোনো জটিলতা না থাকলে জেটি নির্মাণসহ পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে ২০২২ সালের মধ্যে। প্রাথমিকভাবে ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন হবে ২০ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ওই জায়গার ওপর ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডোর জুলফিকার আজিজ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রকল্পটি এতোদিন আটকে ছিল। তবে এ কাজে এরই মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ফাইল চলতি মাসেই ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রকল্পটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তাই আশা করছি সমস্যা অচিরেই কেটে যাবে। তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল চালু হলে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পণ্য খালাসের অপেক্ষায় জাহাজকে অতিরিক্ত সময় বসে থাকতে হবে না।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এদিকে বে-টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরিপের কার্যক্রম শেষ করেছে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের মাধ্যমে বে-টার্মিনাল গড়ে তুলবে। যেখানে ৩টি টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল ও দুটি কনটেইনার টার্মিনাল থাকবে। প্রাথমিকভাবে বে-টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারগুলো ডেলিভারি দেওয়ার জন্য স্পেস তৈরি করা হবে। বর্তমানে এলসিএল কন্টেইনারের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় জেটি থেকে। পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার ট্রাক জেটিতে প্রবেশ করে। সন্ধ্যায় পণ্য ডেলিভারি পেতে এসব ট্রাককে ভিতরে প্রবেশ করতে হয় সকাল থেকে। তাতে বন্দরের অপারেশনাল কাজে নানা সমস্যা হয়। বে-টার্মিনালে ট্রাক টোল রোড দিয়ে যাতায়াত করবে। এতে নগরীতে যানবাহনের চাপ কমবে। থাকবে না বন্দর কেন্দ্রিক যানজট।

শুধু তাই নয়, বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছতে একটি জাহাজকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে হয়। এর বিপরীতে বে টার্মিনাল জেটিতে ভিড়তে লাগবে মাত্র এক কিলোমিটার। এ ছাড়া বে টার্মিনালে পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে পারবে।

কর্মকর্তারা মনে করছেন, বেÑটার্মিনাল এলাকা থেকে এলসিএল পণ্য ডেলিভারি শুরু হলে অন্তত ৫ হাজার ট্রাকের আর জেটিতে প্রবেশের প্রয়োজন হবে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ বেÑটার্মিনাল তৈরির জন্য ২০০৬ সাল থেকে পতেঙ্গা হালিশহর সংলগ্ন উপকূলে জমি পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১ নম্বর জেটি থেকে এনসিটি পর্যন্ত অপারেশনাল এরিয়ার পরিমাণ ৪০০ একর আর বে টার্মিনাল প্রথম দফায় নির্মিত হবে প্রায় ৯০০ একর জমির ওপর। পর্যায়ক্রমে বে টার্মিনালের আয়তন বেড়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ৫০০ একর যা চট্টগ্রাম বন্দরের ছয় গুণ।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম ইপিজেডএর পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলির রাশমনি ঘাট পর্যন্ত উপকূলের প্রায় ৬ কিলোমিটারজুড়ে নির্মিত হবে বেÑটার্মিনাল। জাহাজ চলাচলের জন্য জোয়ারের প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ রাতদিন যাওয়া আসা করতে পারবে জাহাজ। বর্তমানে ৯.৫ মিটারের বেশি গভীরতা নিয়ে জাহাজ জেটিতে আসতে পারে না। বেÑটার্মিনাল হলে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৯টি জাহাজ বার্থিং নিতে পারে। বেÑটার্মিনালে একই সময়ে বার্থিং নিতে পারবে ৩৫টি জাহাজ। বেÑটার্মিনালের অপারেশনাল এরিয়া হবে বর্তমান সুবিধার ৬ গুণ বেশি।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম বলেন, ১৩টি জেটি থাকবে কনটেইনার জাহাজনির্ভর এই টার্মিনাল। এর মধ্যে ৭টি কনটেইনার ও বাকি ৬টি মাল্টিপারপাস জেটি। এখানকার চ্যানেলের গভীরতা বেশি থাকায় কিছু মাদার ভেসেলও ভিড়তে পারবে। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থের জন্য কয়েকটি দেশ বে-টার্মিনালে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বলেন, এই টার্মিনালের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার জমি সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। তাই মামলা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্যে ওই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম এ প্রকল্প প্রসঙ্গে দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ক্রমবর্ধমান আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের চাপ সামাল দিতে হচ্ছে। প্রতি বছর আমদানি রপ্তানি বাড়ছে। কিন্তু সেই হিসেবে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি। তার খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব বেÑটামিনাল কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।

প্রসঙ্গত, নগরীর ইপিজেডের পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় সাগরের ভেতরের অংশে ২৩০০ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে এই বে-টার্মিনাল। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা নেভিগেশন সুবিধার সম্ভাবনার এই টার্মিনালের জমি বরাদ্দ প্রক্রিয়া ঘুরছে তিন বছর ধরে। ২০১৫ সালে জমি বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close