শাহ আলম, খুলনভ

  ০৭ জানুয়ারি, ২০১৯

রোগীর চাপ : খুলনা শিশু হাসপাতালে ঠাঁই নেই

দক্ষিণাঞ্চলে এবারের শীত মৌসুমে নিউমোনিয়া ও সেপটিসেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা চিকিৎসা নিতে শহরের হাসপাতালে আসছে। গেল বছর (২০১৮ সালে) ১৭ হাজার শিশু এসব রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৬৮০ জনের। এবারে শৈত্যপ্রবাহের কারণে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ শিশু বিভাগের সবচেয়ে বড় শিশু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান খুলনা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এদিকে, রোগীর চাপে বেড ও কেবিন খালি না থাকায় ভর্তির জন্য সিরিয়াল দিতে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটকে ‘দুঃখিত’ বিজ্ঞপ্তি টানিয়েছে। বেড খালি হওয়াসাপেক্ষে সিরিয়াল অনুযায়ী ভর্তি করা হবে বলেও এই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র মতে, গত মাসে এক দফা এবং জানুয়ারির শুরুতেই শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

খুলনা শিশু হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ চার মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৩৭০ শিশু নিউমোনিয়া ছাড়াও ডায়রিয়া, জন্ডিস, কফ অ্যান্ড কোল্ড, ফেনিনজাইটিস, নিউমোনাইটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়, এ মাসেই মারা যায় ২৭ শিশু। অক্টোবরে ১ হাজার ৩৭৯ জন আক্রান্ত হয়, মৃত্যু ৪৭; নভেম্বরে ১ হাজার ৪২৭ জন আক্রান্ত হয়, মৃত্যু ৬০ জন; ডিসেম্বরে আক্রান্ত ১ হাজার ৪৩৭ জন আক্রান্ত হয়; মৃত্যু ৬১ জনের। খুলনা শিশু হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৬২৬ শিশুর মৃত্যু হয়।

এদিকে, রোগীর চাপে হিমশিম খেয়ে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেকোনো মুহূর্তে হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা যাবে নাÑ মর্মে বিজ্ঞপ্তি টানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আন্তবিভাগে কোনো বেড ও কেবিন খালি না থাকায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ভর্তির জন্য প্রতিদিন সকালে ভর্তি কেন্দ্রে সিরিয়াল দিয়ে রাখুন, বেড খালি হওয়াসাপেক্ষে সিরিয়াল অনুযায়ী ভর্তি করা হবে।’

হাসপাতাল সূত্র জানায়, শিশু হাসপাতালে বর্তমানে ৩৭টি কেবিন এবং অন্যান্য জরুরি চিকিৎসা বিভাগ ও ওয়ার্ড নিয়ে মোট ২৭০টি বেড রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক শিশু রোগী এখানে চিকিৎসাধীন থাকে। গেল নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর চাপ বেশি ছিল। তবে বর্তমানে চাপ কিছুটা কম বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা বেশি। কেবিন বা বেড খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবার পূরণ হয়ে যায়। ফলে সামাল দিতে বেগ পেতে হয়। যে কারণে সিরিয়াল দিতে বিজ্ঞপ্তি টানানো হয়েছে। সিরিয়াল অনুযায়ী রোগী ভর্তি করা হয়ে থাকে। তার পরও সব রোগীকেই সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অপরদিকে জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, নবজাতক থেকে পাঁচ বছর বয়সী নিউমোনিয়া, ব্রণ কিউলাইটিজ, ডায়রিয়া, আমাশয়, কম ওজন, বাথ, অ্যাসফেকসিয়া, অপরিণত বয়সের বাচ্চা, নিওনেটাল জন্ডিস, জন্মগত হার্টে ছিদ্র, থ্যালাসিমিয়া, অপুষ্টিজনিত ও কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে।

জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শরাফাত হোসাইন জানান, মায়েদের অসচেতনতার কারণেও শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বালিকাবধূদের গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানও ওজনে কম হচ্ছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, জেনারেল হাসপাতালে ওষুধের সংকটের পাশাপাশি মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ইনকিউভিটর আইসিইউ ও সিসিইউ মেশিন নেই।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক এক কর্মশালায় উল্লেখ করেন, জেলায় প্রতি হাজারে গত বছর গড়ে ১৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়। ২০২২ সালে প্রতি হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা ১২তে নামিয়ে আনতে হবে। মা ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে হবে। নিয়মিত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. সুশান্ত কুমার রায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, শিশুমৃত্যুর হার কমাতে স্বাস্থ্য বিভাগের অরগানগুলো কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, আন্তরিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা দান করায় নারী-পুরুষের গড় আয়ু বেড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close