নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০১৮

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিতের আহ্বান ডিপিডিসির

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে হবে গ্রাহকদেরই। সবার সহযোগিতার মাধ্যমেই বিদ্যুতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। গতকাল বুধবার পুরনো ঢাকার গ্রাহকদের জন্য অনুষ্ঠিত ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) গণশুনানিতে এ কথা বলেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান। গণশুনানিতে বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে পুরনো ঢাকার বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে গ্রাহকদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করার আহ্বান জানান তিনি। শুনানিতে ইসলামপুরের বাসিন্দা ফজলুল করিম অভিযোগ করেন, ‘বিদ্যুতের তার, খুঁটি ও ট্রান্সফরমারগুলো পুরনো হয়ে গেছে। রাস্তা চওড়া করার পরও বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তার মাঝখানেই রয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বাড়ির সঙ্গে লেগে রয়েছে ট্রান্সফরমারগুলো। বিদ্যুতের তার এমনভাবে ঝুলে রয়েছে যে, মাথায় করে বস্তা নিয়ে হেঁটে গেলে অনেক জায়গায় তারের সঙ্গে লেগে যায়।’ রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির খেলার মাঠে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে পুরনো ঢাকার গ্রাহকদের নানা অভিযোগ উঠে আসে। তবে প্রশংসাও করেছেন অনেকে। কেউ কেউ বলেছেনÑ বর্তমান সরকারের সময় বিদ্যুতের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং কমে এসেছে। তবে বেশির ভাগ গ্রাহকের অভিযোগ ছিল একেবারেই নিজস্ব সমস্যাকেন্দ্রিক। অন্যদিকে, ডিপিডিসি জানায়, এসব সমস্যা সমাধানে দুই হাজার ৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। সরকারের অনুমোদন পেলে এ বছরই কাজ শুরু করা হবে। এতে ফ্রান্সের দাতা সংস্থা এএফডি অর্থায়নে আগ্রহী। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে লালবাগ, পোস্তগোলা, আজিমপুর, কামরাঙ্গীরচরসহ পুরনো ঢাকার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা মনজুরুল আহসান শুনানিকালে জানান, তার এলাকায় ছোট ছোট কারখানা গড়ে উঠেছে। অল্প জায়গায় স্থাপিত ওই কারখানাগুলোতে এসটি মিটার বসানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি এসটি মিটারের দাম বেশি হওয়ার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে এই মিটার বসানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে বিকল্প অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা বিবেচনা করার অনুরোধ করেন তিনি।

গণশুনানিতে এলাকার কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বাবুল, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান, নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) রমিজ উদ্দিন সরকার, পরিচালক (অপারেশন) হারুন অর রশীদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

হোসনি দালানের বাসিন্দা এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তাদের দুই ভাইয়ের একটি মিটার। তিনি আলাদা মিটার চেয়েছেন। কিন্তু তার ভাইয়ের বিল পরিশোধ করা হয়নি বলে তাকেও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। আরেক গ্রাহক বলেন, পুরনো ঢাকার এই এলাকায় দুই লাখের বেশি মানুষ বসবাস করেন। এখানে সে তুলনায় জায়গা কম। কিন্তু এই এলাকায় স্থাপিত ক্ষুদ্র শিল্পগুলো থেকে প্রতি বছর শ শ কোটি টাকা রেভিনিউ পায় সরকার। ফলে এখানকার গ্রাহকদের বিষয়টি আলাদাভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এই অভিযোগের বিপরীতে অনেককে তাৎক্ষণিক সমাধান দিয়েছে ডিপিডিসি। অনেককে সরাসরি যোগাযোগের কথা জানানো হয়। শুনানিতেই ৪৮ জনের ডিমান্ড নোট জমা নিয়েছে ডিপিডিসি।

অনুষ্ঠানে ওয়ার্ড কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের প্রশংসা করে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের ঘাটতি নেই বললেই চলে। পুরনো ঢাকার এত সমস্যার মধ্যেও বিদ্যুতের সমস্যা ডিপিডিসি দ্রুত সমাধান করছে। সম্প্রতি ট্রান্সফরমারের আগুনে পুড়ে তিনজন মারা যান। তাদের ক্ষতিপূরণের টাকাও ডিপিডিসি দ্রুত দিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘পুরনো ঢাকার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এলাকাবাসীকেও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।’

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ডিপিডিসির স্থানীয় অফিসে নিজেদের এলাকার সমস্যাগুলো উপস্থাপন করার অনুরোধ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু বিদ্যুতের তার, খুঁটি ও ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করলেই চলবে না, পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়গুলোতেও নিজেদের সচেতন করতে হবে। যাতে করে দুর্ঘটনা না ঘটে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে হবে আপনাদেরই। সবার সহযোগিতার মাধ্যমেই বিদ্যুতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist