মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর)

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ৩ শিক্ষক, ব্যাহত পাঠদান

হাজীগঞ্জে ৩১ নম্বর আহমেদাবাদ লুৎফুন্নেচ্ছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে ২০১ শিক্ষার্থীকে পাঠদান চলে মাত্র তিনজন শিক্ষক। এতে একদিকে শিক্ষকরা যেমন অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্লান্তিতে ভোগেন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও অমনোযোগী হয়ে পড়ে। পলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তবে মাঝে মধ্যে প্যারা শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হলেও, অর্থের অভাবে তাও বন্ধ রয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানান।

উপজেলার ১নং রাজারগাঁও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড রামরা (আহমেদাবাদ) গ্রামে অবস্থিত ৩১ নং আহমেদাবাদ লুৎফুন্নেচ্ছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি এলাকায় রামরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়টি চালু হওয়ার পর ১৯৯২ খিস্ট্রাব্দে চারকক্ষ বিশিষ্ট একতলা টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটিতে অফিস এবং অপর তিনটি কক্ষে প্রাক-প্রাথমিকসহ অন্যান্য শ্রেণি কার্যক্রম চলে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে আরেকটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিকে (শিশু শ্রেণি) ২৯ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৪ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৫ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ রয়েছেন তিনজন শিক্ষক ও একজন দপ্তরি কাম-নৈশ প্রহরী। এই তিনজন শিক্ষক দিয়েই চলছে ২০১ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর পাঠদান।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৫জনের পদ রয়েছে। এর মধ্যে বদলীজনিত কারণে একটি পদ শূণ্য এবং একজন শিক্ষক ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। এতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এ শিক্ষক সংকট থাকায় একজন শিক্ষককে একাধিক অতিরিক্ত ক্লাশ নিতে হয়। যার ফলে শিক্ষকেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শিক্ষার্থীরাও অমনোযোগি হয়ে পড়ে। তাছাড়া দাপ্তরিক কাজে প্রধান শিক্ষক অন্যত্র গেলে অথবা প্রধান শিক্ষক বা সহকারি শিক্ষক বা ছুটিতে গেলে পাঠদান মারাত্মক বিঘিœত হয়। এতে শিক্ষার্থীরা দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

গ্রামাঞ্চল হওয়ায় এই বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র পরিবার ও নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাছাড়া আশ-পাশে মানসম্মত কোন সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নেই, যেখানে ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করবে। কথা হয় কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। তাদের অভিযোগ, শিক্ষকের অভাবে যথাযথ পাঠদান হচ্ছে না বিদ্যালয়ে। তাই মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের সন্তানেরা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হাদী বলেন, বিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী আছে এবং মাননীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এখানে নতুন একটি ভবন (একাডেমিক ভবন) দিয়েছেন। যার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ে অন্তত একজন শিক্ষক হলেও দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

পাঠদান ব্যহৃতের বিষয়টি স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ হাছান মোস্তফা বলেন, আমিসহ তিনজন শিক্ষক রয়েছি। মাঝে মধ্যে দাপ্তরিক কাজে আমি বা আমার শিক্ষকেরা অন্যত্র গেলে পাঠদানের সমস্যা হয়। এ বিষয়ে ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চ.দা.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে উপজেলার সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক শূণ্য পদের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। আশাকরি শিঘ্রই শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close