তুহিন আহমদ, মহানগর (সিলেট)

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯

সিলেটে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থামছে না পাথর উত্তোলন

সিলেটে পাঁচটি কোয়ারিতে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্ত্বেও পাথর উত্তোলন থামছে না। পাথর ব্যবসায়ীদের অতিলোভের কারণে এসব কোয়ারিতে বাড়ছে শ্রমিক মৃতের সংখ্যা। প্রশাসন এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অভিযান চালালেও কয়েকদিন পর আবারোও সেই আগের মতই নীরবে চলে পাথর উত্তোলন। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না ‘অতিলোভী পাথর খেকোদের’। বছরের শুরুতেই পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মারা গেছেন তিনজন শ্রমিক। এমনকি অভিযানে নামলে টাস্কফোর্সের উপরও হামলা চালায় পাথর খেকোরা।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেটের পাঁচটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কোয়ারিগুলোয় সবধরনের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত।

পরিবেশবাদীদের মতে, অতিলোভের কারণেই পাথর খেকোরা পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে। শ্রমিকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে পাথর আহরনে বাধ্য করছে পাথর ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় শ্রমিকদের ভয় দেখিয়েও তাদেরকে পাথর উত্তোলনের কাজে লাগানো হচ্ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, এখন থেকেই পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি নিরীহ এসব শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা কোনো ভাবেই ঠেকানো সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পাথর উত্তোলনকালে টিলা ধসে মারা গেছেন দুইজন শ্রমিক। ঘটনার দিন রাতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সোনা মিয়ার (২৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন সকালে উদ্ধার করা নিহত আরেক শ্রমিক নুুরুল হক (৩০) এর মরদেহ। এই ঘটনায় ওই গর্তের মালিক মো. আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যদিও এখনও তাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। রহিম বর্তমানে পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিন টাস্কফোর্স পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লিলাই বাজার এলাকায় বিকেলে পাথরখেকোদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র টাস্কফোর্সের উপর হামলা চালায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনার ঠিক তিন পর গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলায় অবৈধভাবে পাথর আহরণকালে কবির হোসেন (৩৫) নামের এক পাথর শ্রমিক মারা যান। নিহত কবির উপজেলার লামনিগাঁও গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় আরো তিন পাথর শ্রমিক নিখোঁজ হলেও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় গত শুক্রবার ছয়ফুল আলম ও বদরুল আলম নামে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদের কাউকেও পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।

পুলিশের দাবি, পাথর উত্তোলন ঠেকাতে সর্বদা তৎপর রয়েছেন তারা। অবৈধভাবে পাথর আহরনের খবর পেলেই ঘটনাস্থলে অভিযান চালান। এ সময় কাউকে আটক করা সম্ভব না হলেও পাথর উত্তোলনের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়।

তবে অভিযান চালালেও কোনোভাবেই কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। গত বছরই সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটের কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের সময় মারা গেছেন ৬৩ জন। যদিও স্থানীয়দের দাবি এই মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজে নিহত শ্রমিকদের লাশ প্রায়ই ‘গুম’ করে ফেলা হয়। তারপরও দরিদ্র শ্রমিকরা কর্মসংস্থানের তাগিদে এবং অতিরিক্ত মজুরির আশায় বাধ্য হচ্ছেন গভীর গর্তে নেমে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে।

পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাঁপা) সিলেটের মুখপাত্র আব্দুল করিম কীম বলেন, ‘সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পাথর ব্যবসায়ীরা নিরীহ শ্রমিকদের কোয়ারিত ঠেলে দিচ্ছে। যে কারণে শ্রমিকদের নির্মম মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। পাথর ব্যবসায়ীদের অতিলোভের কারণেই শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।’

কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই (তদন্ত) মো. জসিম উদ্দন বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের কড়া নির্দেশ রয়েছে, যেকোনো ভাবেই পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকবে। চলতি বছরে শ্রমিক মৃত্যুর দুই ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পরই আসামিরা পলাতক রয়েছে। পাথর উত্তোলন বন্ধে তৎপর রয়েছে পুলিশ।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close