বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সরকারি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নকর্মীর বেতন এমপিওদের চাঁদায় পরিশোধ!
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন পরিচ্ছন্নকর্মী থাকা সত্ত্বেও ২০০ টাকা করে পরিচ্ছন্ন ফি আদায় করা হচ্ছে ওষুধ কোম্পানির অর্ধশতাধিক মেডিকেল প্রমোশন অফিসারের (এমপিও) কাছ থেকে। আর এই কার্যক্রম মাসের পর মাস ধওে চললেও, কিন্তু টাকার কোনো হিসেবে নেই। গত সোমবার এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এমপিও কর্মীদের অভিযোগ, চাঁদা পরিশোধ না করলে প্রেসক্রিপশনে তার কোম্পানির ওষুধের নাম লিখছেন না চিকিৎসকরা। তবে উপজেলা কর্মকর্তা বলেছেন, বয়স্ক দুই পরিচ্ছন্নকর্মীর বেতন মেটাতে এমপিও কর্মীরা ‘শেয়ার করেন’।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন পরিচ্ছন্নকর্মী কর্মরত আছেন। এরা হলেনÑ আ. মান্নান, মো. বাবুল হোসেন, মোসা. তাছলিমা বেগম ও অমল চন্দ্র মালী। এদের মধ্যে বর্তমানে দুইজন কাজ করছেন। অপর দুইজনকে অসুস্থ দেখিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বাইরে থেকে শিখা রানী সাহা নামের আরো একজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগকৃত ওই কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য প্রতিমাসে ওষুধ কোম্পানির ৫২ জন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সর্বসাকুল্যে যা ১০ হাজার টাকার বেশি। এই টাকা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার আবু মোতলেব হোসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এমপিওর সঙ্গে আলাপ কালে তারা বলেন, যেসব প্রতিনিধি টাকা পরিশোধ করেন তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে মানি পরিশোধের টোকেন। কোনো প্রতিনিধি নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধের ওই টোকেন দেখাতে ব্যর্থ হলে চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে লিখছে না ওই কোম্পানির ওষুধের নাম। তাই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছেন ওই চাঁদা পরিশোধ করতে।
অভিযোগ সত্যতা স্বীকার করে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার মোতলেব হোসেন বলেন, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে আমার কাছে জমা দেন। যা আমি একটি রেজিস্ট্রার খাতায় লিখে রাখি। ওই টাকা থেকে প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা পরিচ্ছন্নকর্মী শিখা রানী সাহাকে বেতন বাবদ পরিশোধ করা হয়। রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ডা. সায়েম স্যারের অনুমতি ছাড়া ওই খাতা দেখানো যাবে না। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে আপনি ডা. সায়েম স্যারের সাঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সব কিছু ভালোভাবে বলতে পারবেন। আমি এর বেশি কিছু জানি না।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আ ন ম মঈনুল ইসলাম বলেন, চারজন পরিচ্ছন্নকর্মীর মধ্যে দুইজন কর্মী বয়স্ক ও তাদের চাকরির বয়স প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তারা প্রায়ই অসুস্থ থাকে। এ জন্য বাইরে থেকে একজন পরিচ্ছন্নকর্মী দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করিয়ে থাকি। তাকে মাসিক কিছু টাকা দেই। এতে ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশন অফিসারা শেয়ার করেন। তবে সরকারি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নকর্মীর বেতন এমপিওদের কাছ থেকে নেওয়ার সুযোগ আছে কি না, তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
"