মিনহাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৫ জুলাই, ২০২০

করোনাভাইরাস

চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ

করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নমুনার জটে নাকাল ছিল চলতি মাসের শুরুতে সরকারি চার ল্যাব। নমুনা জটের কারণে আড়াই হাজার নমুনা ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে। নুমনা জটের কারণে পরীক্ষা ফল পেতে সময় লেগেছে ১০ থেকে ১৪ দিন। এমন নাকাল জটের মধ্যেই হঠাৎ গেল পাঁচ দিন থেকেই নমুনার অভাব দেখা দিয়েছে সরকারি চার ল্যাবে। এরই মধ্যে নমুনা না পাওয়ায় গেল ১০ থেকে ১৩ জুলাই তিন দিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সিভাসুর ল্যাব ইনচার্জ অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি জানান, প্রতিদিন আড়াইশ’র কাছাকাছি নমুনা পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু তিনদিন নমুনার অভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবারে কিছু নমুনা দিয়ে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে। এই দিকে কিছু ল্যাবে এক শিফট কিংবা দেড় শিফট পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা চালিয়ে নিলেও বাকি সময় কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন নমুনার কারণে। বেশ কিছুদিন ধরেই নমুনা না পাওয়ায় সক্ষমতার অর্ধেকও পরীক্ষা করতে কষ্ট হচ্ছে এসব ল্যাবে। তবে এমন অবস্থা হওয়ার কারণ হিসেবে সরকারি ফি নির্ধারণের পাশাপাশি মানুষের আগ্রহ কমে এসেছে বলে অভিমত স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের।

যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নমুনা সংগ্রহের জন্য আগের মতোই তাদের কার্যক্রম বিদ্যমান। তবে সাধারণ মানুষ নমুনা দিতে অনাগ্রহী হওয়ায়, তা কমে এসেছে। এরপরও নমুনা সংগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। অন্যদিকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বাড়ানোর মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তাই আরো অধিকতর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ তাদের। জানা যায়, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যমান ছয়টি ল্যাবে গড়ে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করে আসছিল এতদিন। গেল চারদিন থেকেই তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর মধ্যে গেল ১৩ জুলাই নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৮৫৬টি। তার আগের ১২ জুলাইতে পরীক্ষা হয় ৫৯৭টি। ১১ জুলাই ৪২৫টি নমুনা পরীক্ষা হলেও তার আগের দিন ১০ জুলাইতে নমুনা পরীক্ষা হয় ১ হাজার ৯৯টি। ৯ জুলাই পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৭৮১টি। এদিকে নমুনা কমে যাওয়া বা পরীক্ষা না হওয়ায় অশনিসংকেত দেখছেন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়া এটা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।

এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, সবাই পরীক্ষার আওতায় আসছে। আর পরীক্ষা আওতায় সবাইকে না আনা গেলে কিংবা অসুস্থ-সুস্থ পৃথক করা না গেলে একসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা করে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ এ বিশেষজ্ঞের। ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ জানান, আগে প্রতিদিন নমুনার চাপে আমাদের হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু গেল কিছুদিন ধরে চাপ নেই। নমুনাও কম সংগ্রহ হচ্ছে। সামন্য কিছু নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে, যা আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, নমুনা পরীক্ষা কমে গেলেও তা সামনে বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক ফি নির্ধারণ হওয়ার পর নমুনা পরীক্ষাও কমতে শুরু করেছে। তার মধ্যে অনেকেই অপ্রয়জনীয় পরীক্ষা করাতেন, সেটিও বন্ধ। এছাড়া দ্বিতীয় নমুনাও পরীক্ষাও বন্ধ আছে। যার কারণে আগের চেয়ে নমুনা সংগ্রহ কম হচ্ছে। তবে অনেক দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাসহ সামর্থ্যহীন ব্যক্তিদের ফ্রিতে পরীক্ষা করাতে সমস্যা নেই। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বুথে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে নমুনা সংগ্রহ আগের মতোই চালিয়ে যায়। আশা করছি, সেটি সামনে বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close