মিনহাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৪ জুলাই, ২০২০

চট্টগ্রামে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা

চট্টগ্রাম করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের ১০১ দিন পার করল। ইতোমধ্যে গত ১০১ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু সংক্রমণ রোধ কিংবা আক্রান্তের গতি কমার দৃশ্য এখন পর্যন্ত চোখে পড়ছে না চট্টগ্রামে। নেই তেমন কোনো সুখবরও। বরং দিন গড়াতেই অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতি। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুও। কঠিন হয়ে পড়ছে বন্দর নগরী। এমন পরিস্থিতি অনেকটাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং স্বাস্থ্য বিভাগও। আর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার গতি রোধ এবং মানুষের মাঝে এ সচেতনা বৃদ্ধি না বাড়লে সামনের দিনগুলোতে আরো ভয়ংকর হতে পারে এ সংক্রমণ। এছাড়া স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ কাজে না লাগানোর কারণেই এমন খেসারত দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। তাই স্বাস্থ্য বিভাগসহ সবাইকে এ বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এদিকে, শনাক্তের শততম দিন গত বৃহস্পতিবার আক্রান্ত হয়েছেন ২৫০-এর অধিক মানুষ। এর মধ্যে মোট আক্রান্তের সাড়ে ৫ হাজার অধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন শুধু গত জুন মাসেই। অর্থাৎ শুধু জুন মাসেই ৬৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, আক্রান্তের হার যেমন বাড়ছে, তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে না। বরং সেটিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যদিও এমন খারাপ খবরের মধ্যেও সুখবর রয়েছেন। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্তের প্রায় ১৩ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন। আর স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সামনের দিনগুলোতে সুস্থতার হার আরো বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রামে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় গত ৩ এপ্রিল। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা বর্তমানে ৯ হাজারের ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে পুরো এপ্রিল মাসে শনাক্ত হয়েছেন শুধু ৭২ জন। কিন্তু মে মাসে তা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। দুই মাসে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত রোগী ছিল ৩ হাজার ১৯১ জন। তবে দুই মাসের চেয়ে দ্বিগুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে শুধু বিদায়ী জুন মাসেই। অর্থাৎ গত জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৬৬১ জন। যা মোট আক্রান্তের ৬৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। হিসাবে দেখা যায় মে মাসের তুলনায় জুন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। আক্রান্ত নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও বিশ্লেষণে ভালো খবর নেই। বরং দিন গড়াতেই তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বুধবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৮ জনের। এর মধ্যে ৯৯ জনরই মৃত্যু হয়েছে গত জুন মাসে। যা মোট মৃত্যুর ৫৫ দশমিক ৬১ বা অর্ধেকের চেয়ে বেশি। তার আগের মাস মেতে মৃত্যু হয় ৭৩ জনের। সংক্রমণ ধরা পড়ার প্রথম মাস এপ্রিলে মৃত্যু হয় মাত্র ছয়জনের। অর্থাৎ মে মাসের তুলনায় জুন মাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই জুন মাসকে করোনার পিক সময় ধরা হয়। যার কারণেই জুনে এসে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাটা বেড়েছে। তবে এখন যদি এ সংক্রমণ রোধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি মহামারি ধারণ করবে। করোনার পরিস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, শুরু থেকেই এ ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যত উদ্যোগ কাজে লাগাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের কিছু এলোমেলো সিদ্ধান্তের কারণে এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে লকডাউন ও সর্বশেষ রেড জোন ঘোষণার করেও কাজে লাগাতে পারেনি। এটি শুধু স্বাস্থ্য বিভাগেরও একার কাজ নয়, প্রশাসনেরও দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি আজও। চিকিৎসা সুবিধাও যেমন থাকর দরকার ছিল, তা নেই। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক সংক্রমণ রোধে কার্যত লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও উন্নতি হবে বলে মনে করেন প্রবীণ এ চিকিৎসক। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, শুরু থেকেই চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। যদিও মাঝখানে কিছুটা সমস্যা ছিল, তবে সেটিও ধীরে ধীরে সমাধান করা হচ্ছে। সংক্রমণ রোধে জোনভিত্তিক ঘোষণা করা হয়েছে। সামনে এমন একাধিক পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হবে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ চাইলেও সংক্রমণ রোধ করতে পারবে না, এটি প্রতিটি ব্যক্তি,পরিবার ও সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই এ সংক্রমণ থেকে বাঁচা যেমন সম্ভব হবে, তেমনি নিয়ন্ত্রণও করা যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close