ইলিশের স্যুপ এবং নুডুলসের পর এবার সব পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে পাঙ্গাশের মচমচে আচার ও পাউডার উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্য প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম ও তার গবেষক দল। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ‘মিঠাপানির মাছের আহরণোত্তর ক্ষতি প্রশমন ও মূল্য সংযোজন’ প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম বলেন, ‘দেশে পাঙ্গাশ মাছ সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় একে গরিবের আমিষ বলা হয়। কিন্তু বাজারে অন্যান্য মাছের উৎপাদন ও জোগান বেড়ে যাওয়ায় পাঙ্গাশের বাজার মূল্য পড়ে গেছে। এমনকি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাংগাসের উৎপাদন ছিল ৭ দশমিক ৫ লাখ টন। বর্তমানে উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘খাদ্যসহ অন্যান্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা পাঙ্গাশ চাষে লোকসান গুনছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পাঙ্গাশ মাছ থেকে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন করা প্রয়োজন। তাই দীর্ঘ দুই বছর গবেষণা করে পাঙ্গাশের এই মজাদার দুটি পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।’

পাঙ্গাশ থেকে উদ্ভাবিত মচমচে আচার সম্পর্কে অধ্যাপক নওশাদ বলেন, সাধারণ রান্নার যন্ত্রপাতি ও তৈজসপত্র দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রেখে মচমচে পাঙ্গাশ আচার তৈরি করা যাবে। আচারটিতে পুষ্টিমান পাওয়া গেছে শতকরা ৩৭ ভাগ আমিষ, ২৮ ভাগ স্নেহ, ১৬ ভাগ মিনারেল ও ১১ ভাগ ফাইবার। আচারটি শুকনো ও মচমচে হওয়ায় প্রায় এক বছরের অধিক সময় কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। এক কেজি পাঙ্গাশ থেকে ৩৫০ গ্রাম পাঙ্গাশ আচার পাওয়া সম্ভব, যা উৎপাদন করতে সর্বমোট ১২০-১৫০ টাকা খরচ পড়ে। ৩৫০ গ্রাম আচার ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রয় করা সম্ভব।’

অন্যদিকে পাঙ্গাশ থেকে উদ্ভাবিত পাউডার সম্পর্কে অধ্যাপক নওশাদ বলেন, ‘পাঙ্গাশের চর্বি ও আমিষকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ উপযোগী করে পাঙ্গাশ পাউডার তৈরি করা হয়েছে। এক কেজি পাঙ্গাশ থেকে ২০০-২৫০ গ্রাম পাউডার তৈরি করা সম্ভব। পাঙ্গাশের পাউডার দীর্ঘদিন প্রায় এক বছরের অধিক কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। পাঙ্গাশের পাউডার দিয়ে আচার, ভর্তা, স্যুপ, নুডল্স, তরকারি, খিচুড়ি ইত্যাদি বানানো যাবে অথবা একে পাউডার দুধ বা নবজাতকের খাবার, বেকারি পণ্য, বিস্কুট চিপস্ বা অন্যান্য যেকোনো খাদ্যদ্রব্যে মিশিয়ে পুষ্টিগুণ বাড়ানো যায়।’

‘মাত্র ১ দশমিক ৫০ টাকা মূল্যের ৩ গ্রাম পাউডার দিয়ে একজনের খাওয়ার উপযোগী ২৫০ মিলি স্যুপ বা ৮০ গ্রাম ওজনের এক বাটি নুডল্স তৈরি করা সম্ভব। পাঙ্গাশের পাউডারে ৪৫ ভাগ আমিষ, ৩২ ভাগ চর্বি, ১ ভাগ মিনারেল ও ৯ ভাগ ফাইবার পাওয়া গেছে।’ দ্রুতই পাঙ্গাশের পণ্য দুটি বাজারে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

"